প্রতিদ্বন্দ্বি ঋষি সুনাককে হারিয়ে যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন লিজ ট্রাস। ব্রিটেনের বর্তমান এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এবং ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয়।
এদিন স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টায়) যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্রিটিশ নারী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এমন এক সময়ে ক্ষমতা গ্রহণ করলেন যখন যুক্তরাজ্য জীবনযাত্রার সংকট, শিল্প অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার ব্রিটিশ সময় বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টায়) ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে লিজ ট্রাসের টানা কয়েক সপ্তাহের প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর আজ দলীয় নেতা এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হলো।
আর এর মাধ্যমে অবসান ঘটল বরিস জনসনের শাসনের। টানা কয়েক মাস ধরে নানামুখী কেলেঙ্কারি এবং সমালোচনার পর গত জুলাই মাসে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
রয়টার্স বলছে, সোমবার নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার পর মঙ্গলবার বিজয়ী প্রার্থী ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে দেখা করতে স্কটল্যান্ডে যাবেন। সেখানে নতুন নেতাকে সরকার গঠন করতে বলবেন রানী।
ব্রিটেনের সম্ভাব্য নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস বর্তমানে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করছেন। একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করা ৪৭ বছর বয়সী ট্রাসের বাবা ছিলেন অংকের অধ্যাপক এবং মা একজন নার্স। ট্রাস অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেন তিনি। এরপর তিনি রাজনীতিতে নামেন। ট্রাস প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ২০১০ সালে। তবে তিনি প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার বিরুদ্ধে ছিলেন।
পরবর্তীকালে ব্রেক্সিটের নায়ক হিসাবে আবির্ভূত হওয়া বরিস জনসনকে সমর্থন করেন ট্রাস। ব্রিটিশ মিডিয়া প্রায়ই লিজ ট্রাসকে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করে থাকে।
সোমবার ফল ঘোষণার পর বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বিজয়ী নেতার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। ক্ষমতার এই হস্তান্তর সাধারণত লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে হয়ে থাকে। তবে এবার সেটা হবে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসলে। মূলত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বর্তমানে স্কটল্যান্ডে তার গ্রীষ্মকালীন ছুটি উদযাপন করছেন।
এছাড়া স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় জনসমক্ষে প্রকাশ্যে উপস্থিতিও কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাই এই মুহূর্তে লন্ডনে ফেরার কোনো পরিকল্পনা নেই রানীর। আর এ কারণে ক্ষমতা হস্তান্তরের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যেও এবার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ফলাফলের পর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিদায়ী বক্তব্য দেবেন বরিস জনসন। এরপর তিনি স্কটল্যান্ডে যাবেন। সেখানে জনসন রানীকে তার পদত্যাগের কথা জানাবেন।
এরপর সুনাক এবং ট্রাসের মধ্যে যিনি বিজয়ী হবেন তিনি রানীর সাথে দেখা করবেন। রানী তাকে সরকার গঠন করতে বলবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ রাজকীয় রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করা হবে।
রানীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আনুষ্ঠানিক নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গেই লন্ডনে ফিরে যাবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভাষণ হবে।
লন্ডনের সময় অনুযায়ী বিকাল চারটার দিকে ভাষণ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী তার নতুন মন্ত্রিসভা নিয়োগ করবেন। বুধবার নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো হাউস অব কমন্সে যাবেন।