পূর্ব চিন সাগরে তাইওয়ানকে ঘিরে রেখেছে চিনের যুদ্ধজাহাজ। নিশানায় তাইওয়ানের বন্দর ও নৌঘাঁটি। এদিকে আকাশপথে চক্কর কাটছে অন্তত ৬৮টি চিনা যুদ্ধবিমান। সামরিক মহড়ার সময় তাইওয়ান প্রণালীর কাছাকাছি চলে এসেছে চিনের রণতরী, বোমারু বিমান।
শুক্রবার চিনা সামরিক বাহিনীর মহড়া চলাকালীন ৬৮টি চিনা যুদ্ধবিমান ও ১৩টি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালীর কাছাকাছি চলে এসেছিল। তাইওয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক চুক্তি ভেঙে তাইওয়ান প্রণালীর কাছাকাছি চলে এসেছিল চিনের যুদ্ধজাহাজ। ছ’দিক দিয়ে তাইওয়ানের নৌঘাঁটিগুলিকে ঘিরে ফেলতে চাইছে চিনের রণতরীগুলি। সমুদ্র ও আকাশসীমার নীতি লঙ্ঘন করে চিনের সেনা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
চিনা বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা দফতরের তরফে ধারাবাহিক ভাবে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। চিন এর আগে ঘোষণা করেছিল, তাইওয়ানের চারদিকে ৬টি এলাকায় তারা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া চালাবে। তবে সামরিক মহড়া শুরু হওয়ার আগেই তাইওয়ানের আকাশসীমায় ঢুকেছে ঝাঁকে ঝাঁকে চিনা যুদ্ধবিমান। তাইওয়ান প্রণালীকে বিপজ্জনকও ঘোষণা করেছে বেজিং।
তাইওয়ানের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণের সমুদ্রে গত কয়েক দশকের সব চেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চিন। অভিযোগ, তাইওয়ানের প্রণালীতে অন্তত ১১টি চিনা ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে। চিন ও তাইওয়ানের সংযোগকারী ওই প্রণালী বিশ্ব অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই প্রণালীকেই অবরুদ্ধ করে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে চিন। যদিও তাইওয়ানের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে চিন। তাদের দাবি জাতীয় নিরাপত্তার কারণেই সামরিক মহড়া চলছে। ইস্টার্ন থিয়েটার কম্যান্টের অধীনে, নৌসেনা, বায়ুসেনা, রকেট বাহিনীর যৌথ মহড়া চলছে। তাদের সহযোগিতা করছে চিনের সামরিক কৌশল বাহিনী। সেখানে পৌঁছে গেছে প্রয়োজনীয় রসদও।
জলসীমা এবং আকাশসীমা থেকে কী ভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানা যায় এবং হাতাহাতি লড়াইয়ে কী ভাবে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা যায়, চিনের তরফে তার অনুশীলন চলছে বলে দাবি তাইওয়ানের। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তাইওয়ানকে ঘিরে চিনের এই সামরিক মহড়া চরম সংকট তৈরি করতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা সে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যে ৬টি এলাকায় চিন মহড়া চালাবে তার তিনটি পড়েছে তাইওয়ানের উপকুল থেকে ১২ মাইলের সমুদ্রসীমার ভেতরে। এর অর্থ হল, তাইওয়ানের আকাশ ও সমুদ্রসীমার নিয়ম লঙ্ঘন করেই চিন সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। তাইওয়ান থেকে এই এলাকার দূরত্ব ২০ কিলোমিটারেরও কম। গত সাত দশকের সঙ্ঘাত-পর্বে কখনওই তাইওয়ান সীমান্তের এত কাছে চিনা ফৌজের যুদ্ধ মহড়া হয়নি। পর্যবেক্ষকদের মতে, এখনই সরাসরি যুদ্ধের পথে না গেলেও চিন নানা কৌশলে তাইওয়ানকে চাপে রাখার চেষ্টা করবে।