আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর গোলামি, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার তথা স্মরণ করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কোরআনুল কারিমে আল্লাহর এ স্মরণ তথা জিকিরের নির্দেশই এসেছে অনেকবার। প্রতিবারই বেশি বেশি জিকিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একাধিক আয়াতে মহান আল্লাহর নির্দেশ এমন-
১. یٰۤاَیُّهَاالَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰهَ ذِکۡرًا کَثِیۡرًا
‘হে ঈমানদাররা! তোমরা বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির বা আল্লাহকে স্মরণ কর।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৪১)
২. یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمۡ فِئَۃً فَاثۡبُتُوۡا وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোনো দলের মুখোমুখি হও, তখন অবিচল থাকো, আর আল্লাহকে বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ৪৫)
৩. فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘এরপর যখন নামাজ শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)
এভাবে মহান আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করার ব্যাপারে অনেক নির্দেশনা এসেছে কোরআনে। কোরআনের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক উত্তম ও মর্যাদা সম্পন্ন জিকিরের কথা বলেছেন। মহান আল্লাহকে বিশেষ কিছু শব্দে ডাকার কথা বলেছেন। আল্লাহর গুণাগুণ বর্ণনা করতে বলেছেন। সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ’কালেমা’ জিকির করার কথা বলেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো- لَا إِلَهَ إِلَّا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আর সর্বোত্তম দোয়া হলো- اَلْحَمْدُ للهআলহামদুলিল্লাহ।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
২. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসা আলাইহিস সালাম একবার আল্লাহর কাছে আরজ করেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এমন একটি দোয়া শিখিয়ে দিন, যার মাধ্যমে আমি আপনার জিকির/স্মরণ করবো এবং আপনার কাছে প্রার্থনা করবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন- হে মুসা! তুমি বল- لَا إِلَهَ إِلَّا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে আল্লাহ! আপনার সকল বান্দাই তো এই জিকির করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন, তুমি বল- لَا إِلَهَ إِلَّا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ কিন্তু আমি চাইছি আমাকে বিশেষ একটি দোয়া শিখিয়ে দেবেন; যা কেবল আমার জন্য হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন, হে মুসা! আমি ছাড়া সাত আসমান, সাত জমিন ও তার মাঝে যা রয়েছে সবকিছু যদি এক পাল্লায় থাকে আর لَا إِلَهَ إِلَّا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অপর পাল্লায় থাকে তাহলে لَا إِلَهَ إِلَّا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লা ভারি হবে।' (মুসতাদরাকে হাকেম)
সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে, দুনিয়া ও পরকালের সফলতা পেতে জিকিরের বিকল্প নেই। বিশেষে করে মুমিন মুসলমানের উচিত উঠা-বসা, চলাফেরায় অবসর সময়ে হাদিসে বর্ণিত কালেমার জিকেরে নিজেদের নিয়োজিত করা।
মনে রাখতে হবে
মহান আল্লাহর সব হুকুম পালন করাই তার জিকির। তাই নামাজ, রোজা, হজ যাকাতসহ জীবনের প্রতিটি কাজ মহান রবের নামে ও উদ্দেশ্যে করার নামই জিকির। জিকির হোক প্রতিটি কাজে। প্রতিটি মুহূর্তে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সার্বক্ষণিক জিকির করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।