করোনা ভাইরাসের পর এবার মাংকিপক্সের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গোটা নিউ ইয়র্কবাসী। নিউ ইয়র্ক সিটিতে এখনও ঘাতক হিসেবে রয়েছে করোনা ভাইরাসের বিএ ৫ ভেরিয়েন্ট। এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে। এই বিপদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাংকিপক্স ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। অনেক নিউ ইয়র্কার কোভিড নিয়ে উদাসীনতা দেখালেও এবং কোভিডের সংক্রমণ মাত্রা বেড়ে চললেও গণমাধ্যমে সঠিক সংখ্যা না এলেও প্রকৃত সংক্রমণ হার অনেক বেশি। কারণ কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত অসংখ্য রোগী ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য হোমকিট ব্যবহার করায় যারা ভাইরাস পজিটিভ তারা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত না করা সংক্রামিতদের সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
সিটিতে অনেকে প্রথম বার করোনা ভাইরাসের বিএ ৫ সাবভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে, আবার এমন অনেক রোগী আছে যারা প্রথমবার সেরে ওঠার পর দ্বিতীয় দফা এই ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশ গত সপ্তাহে মাংকি পক্সকে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ বলে ঘোষণা করে সদস্য দেশগুলোকে জরুরী জনস্বাস্থ্য সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্টের ফেডারেল স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে যে ডেনমার্কে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে মাংকিপক্সের ৩০০,০০০ ভ্যাকসিন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে, যা অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রে পৌছবে।
এছাড়াও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন পোলিও বিস্তারকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে এবং ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটির উত্তর-পশ্চিমের রকল্যান্ড কাউন্টিতে আশঙ্কাজনক হারে পোলিও বিস্তার ঘটেছে জানানোর পর সংশ্লিষ্ট কাউন্টির স্বাস্থ্য বিভাগ রকল্যান্ড কাউন্টিতে পোলিও ভ্যাকসিন কেন্দ্র চালু করেছে। নিউইয়র্ক সিটি হেলথ বিভাগ গত সোমবার নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছে যে সিটিতে কোভিড ১৯ টেস্ট পজিটিভ হার ১৫ শতাংশের নিচে, যা ফেডারেল হিসাবে স্বাভাবিক সংক্রমণ হারের চেয়ে অনেক বেশি এবং সিটির প্রতিটি বরোর চিত্র একই ধরনের। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটিতে বর্তমানে প্রতিদিন ৪,২০০ জন কোভিডে সংক্রমিত হচ্ছে এবং হাসপাতালে ভর্তির হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ আশ্বস্ত যে নিউইয়কাররা ইতোমধ্যে যথেষ্ট ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে ওঠেছে, তা বুস্টার ডোজসহ ভ্যাকসিন গ্রহণের কারণে অথবা ইতিপূর্বে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার কারণে।
এর ফলে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের অধিকাংশেরই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। কিন্তু বয়স্ক ও জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্তদের মধ্যে যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অনেকের ক্ষেত্রে অবস্থা আশঙ্কাজন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়া উপায় থাকছে না।
কর্তৃপক্ষ জনসমাগমের স্থানগুলোতে মাস্ক পরে থাকার সতর্কতা বজায় রেখেছে এবং গণপরিবহন, অফিস ও ব্রডওয়ে শো এর মতো স্থানগুলোতে ব্যতিক্রম ছাড়াই মাস্ক পরিধান করছে। রাস্তাঘাটেও মাস্ক পরছেন সতর্ক ও সচেতন লোকজন। কিন্তু নিউইয়র্কের অধিকাংশ মানুষকে মাস্ক না পরেই চলাফেরা করতে দেখা যায়, যেন তারা আর ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয় করছেন না। তারা মনে করছেন যে যেহেতু তারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন সেজন্য ভাইরাস তাদের জন্য ভয়ের কোনো কারণ নয়। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সিটিবাসীকে সতর্ক করেছেন যে ভ্যাকসিন নেয়ার কারণে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা পুরোপুরি দূর হয়ে যায় না এবং ভ্যাকসিন নেয়া বহু মানুষের আক্রান্ত হওয়া থেকে তা প্রমাণিত। অতএব প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সকলের মাস্ক পরিধানসহ সকল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলা উচিত।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে যে সিটি কর্তৃপক্ষ ভাইরাস টেস্টের হোমকিট বিতরণ ছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধী ‘প্যাক্সলোভিড’ ওষুধ বিতরণ করছে, যা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার গুরুতর অবস্থা থেকে সংশ্লিষ্টদের রক্ষা করবে। সিটির হেলথ ডিপার্টমেন্টের হিসাব অনুযায়ী গত ৪ জুলাইয়ের মধ্যে তারা সিটিতে ৮২,০০০ কোর্স প্ল্যাক্সলোভিড বিতরণ করেছে এবং বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।