আজ শুক্রবার, ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশে এবার নানা আয়োজনে বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে। বাঘের অন্যতম আবাসস্থল সুন্দরবনসংলগ্ন জেলা বাগেরহাটেও দিবসটি উপলক্ষে বন বিভাগ নানা আয়োজন রেখেছে। বন বিভাগ, সরকার, পরিবেশ ও উন্নয়ন কর্মীদের নানা উদ্যোগেও বাঘের টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সারা বিশ্বে। তবে বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘপ্রেমীদের আশার আলো দেখাচ্ছে সুন্দরবন। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের দাবী সুন্দরবনে এবার বাঘ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ ছিল। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১৪টি। এদিকে ২০০১ সাল থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনের অন্তত ৪৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ৮টি বাঘের, বিভিন্ন সময় দুষ্কৃতকারীদের হাতে ১৩টি, লোকালয়ে আসায় জনগণের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ৫টি বাঘের, ২০০৯ সালে ভয়ংকর সিডরে মৃত্যু হয়েছে একটি বাঘের। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় চোরাশিকারিদের মেরে ফেলা ১৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে র্যাব-৬ ও বন বিভাগ।
বন বিভাগের হিসেব অনুযায়ী, সর্বশেষ জরিপের পরে অন্তত ৮টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কি পরিমাণ বাঘের জন্ম হয়েছে সে তথ্য নেই বন বিভাগের কাছে। সেই হিসেবে বর্তমানে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ রয়েছে। তারপরও বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনে বাঘ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বাঘ সংরক্ষণ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন সুন্দরবনে বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়া ও বাঘের দেখা পাওয়াকে উল্লেখ করেছেন।
সম্প্রতি শনিবার (১২ মার্চ) সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছিটা কটকা খালে একসঙ্গে ৪টি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন পর্যটকরা। তখন দর্শনার্থীদের দেখা এই বাঘের দৃশ্য ভাইরালও হয়েছিল। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি বনরক্ষীরা কটকা এলাকায় এক সঙ্গে ৩টি বাঘ দেখতে পেয়েছিলেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় শরণখোলা ও মোংলার লোকালয়ে বাঘ আসার খবর রয়েছে বন বিভাগের কাছে।
শরণখোলা ওয়াইল্ড টিমের ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর মো. আলম হাওলাদার বলেন, সম্প্রতি সময়ে বেশ কয়েকবার সুন্দরবনের বাঘ শরণখোলার লোকালয়ে এসেছে। আগে কখনো এত বার বাঘ আশতে শোনা যায়নি। সুন্দরবনে আমরাও কয়েকবার বাঘ দেখেছি। বাঘের বাচ্চাও দেখেছি কটকা এলাকায়।
আলমগীর হোসেন নামের এক বনজীবী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে যাই, কিন্তু তেমন কোনো সময় বাঘের দেখা পাইনি। গত বছর শরণখোলা রেঞ্জের চাপড়াখালি, সুপতি ও আলী বান্দা এই তিনটি এলাকায় আমি বাঘ দেখেছি। বাচ্চাসহ বাঘও দেখেছি তখন। আগে কখনো এত অল্প সময়ে কয়েকবার বাঘের দেখা পাইনি। এ ছাড়া বাঘের গর্জনও শুনেছি কয়েকবার।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের বাঘরক্ষায় বন বিভাগ কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে আমরা সুন্দরবনে টহল জোরদার করেছি, যার ফলে সুন্দরবনে চোরাশিকারিদের তৎপরতা কমেছে। সর্বশেষ করোনা মহামারিতে একসঙ্গে দীর্ঘদিন সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ ছিল। তখন সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি নিজেদের মত করে বেড়ে উঠেছে। ওই সময়ে বাঘেরাও তাদের ইচ্ছেমত বনের মধ্যে বিচরণ করেছেন। তখন কয়েকবার বনরক্ষীরা বাঘ দেখেছেন।
‘এ ছাড়া আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম, প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রবেশ বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি অনেক ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। নিরাপদে প্রাণীরা বংশবিস্তার করতে পারে। করোনা মহামারি থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকবার সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় বাঘ ও বাঘের শাবক দেখেছে বনরক্ষী, স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা।’
এসব কারণে আমরা মনে করছি সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, সর্বশেষ গণনায় সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ ছিল। গেল দেড় বছরে সুন্দরবনে যেভাবে বাঘ দেখা গেছে, আশা করছি সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।