মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে টেলিফোন আলাপ হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফর ঘিরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) টেলিফোনে ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট কথা বলেন এ দুই নেতা। দীর্ঘ এ টেলিফোন আলাপে তাদের মধ্যে মূলত তাইওয়ান ইস্যু ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু এর মধ্যেই সম্প্রতি উভয় দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রায় নিয়মিতই টেলিফোন আলাপ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পঞ্চমবারের মতো আলাপ করলেন বাইডেন ও জিনপিং। এর আগে সবশেষ চার মাস আগে টেলিফোন আলাপ করেন তারা।
রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের এক মাস পর গত ১৮ মার্চ এক ভিডিও কলে প্রায় দুই ঘণ্টা কথা বলেন বাইডেন ও জিনপিং। মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তাতে ইউক্রেন ইস্যুই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। বাইডেনকে জিনপিং বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান সংঘাত ‘কারও স্বার্থেই হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার টেলিফোন আলাপ শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই নেতার মধ্যকার আলাপ দুই ঘণ্টা ১৭ মিনিট স্থায়ী হয়। এর বাইরে বিবৃতিতে আরও কিছুই বলা হয়নি বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সংঘাত গত কয়েক বছরের। এর মধ্যে তাইওয়ান নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং সংকট ক্রমেই ঘনিভূত হচ্ছে। জিনপিংয়ের সঙ্গে বাইডেনের টেলিফোন আলাপ শুরু হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে আলাপের বিষয় কি হতে পারে সেটা নিয়ে কথা বলেন হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল মূখপাত্র জন কিরবি। তিনি বলেন, ‘চীনের আগ্রাসী, জোর-জবরদস্তিমূলক আচরণ নিয়ে চলমান উত্তেজনা আলাপে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে।’
এ মুহূর্তে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের উত্তেজনার প্রধান কারণ হচ্ছে বাইডেন প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফর। মার্কিন কর্মকর্তারা চীন সাগরের দ্বীপদেশটিতে হরহামেশাই সফর করে থাকেন।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি পেলোসির সম্ভাব্য সফরকে ‘প্রচণ্ড উস্কানি’ হিসেবেই দেখছেন চীনা কর্মকর্তারা। আর এ কারণেই গত কয়েকদিন ধরেই একের পর এক হুশিয়ারি অব্যাহত রেখেছেন তারা।
পেলোসিকে নিয়ে সবশেষ বুধবার (২৭ জুলাই) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনকে সতর্ক করে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, তিনি তাইওয়ান সফরে এলে তা হবে চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি মারাত্মক হুমকি। এর পরিণতি ভোগ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
এরপর সবশেষ বুধবার বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘আমরা স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের তীব্র বিরোধিতা করছি।’ তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যায় এবং চীনের দৃঢ় অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানায়, তাহলে তাদের এর পরিণাম ভোগ করতে হবে।