২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৭:০৩:১৫ অপরাহ্ন


সিন্ডিকেট: বাংলা ওয়েব সিরিজে নতুন দিগন্ত
বিনোদন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৭-২০২২
সিন্ডিকেট: বাংলা ওয়েব সিরিজে নতুন দিগন্ত ফাইল ফটো


সিরিজ রিভিউ: শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘সিন্ডিকেট’।

একটি বিষয় একই সঙ্গে খুব আর্টিস্টিক আবার কমার্শিয়াল। বাস্তব আবার স্বপ্ন। স্বীকার কিংবা অস্বীকার। যাই বলি তবুও এক কথায় বোঝানো মুশকিল আসলে ঠিক কতটা নিখুঁত পরিশ্রমে দাঁড়ায় একটি 'সিন্ডিকেট'।

থ্রিলার, অ্যাকশন জনরার আরেক রূপ হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল থ্রিলার। গল্পে অর্থসংক্রান্ত এমনই এক সিন্ডিকেটের খোলাসা করা হয়েছে। দেখা যায় জিশা আর আদনান চাকরি করে ব্যাংকে। তবে জিশা আর আদনান যে শুধু সহকর্মী তা নয়। এসপার্গাস  সিনড্রোমে আক্রান্ত আদনানের সঙ্গে প্রেম করে জিশা। কাজের ফাঁকে অফিসের নিচে চায়ের দোকানে দুজনে গল্প করে, আদনান কবিতা শোনায়, জিশা আদর মেখে দেয় আদনানের গালে। কী সুন্দর মিষ্টি প্রেমের গল্প হতে পারত তাই না? কিন্তু জীবন তো কেবল কোনো মিষ্টি প্রেমের গল্প নয়। বাস্তবতায় ধরা দিতে হয় সবাইকেই।

শুরুতেই সাসপেন্স ধরা দেয় ক্যামেরায়। প্রথম দৃশ্যেই জিশাকে অস্থির লাগে। কিছু একটা নিয়ে সে চিন্তিত, কেউ একজন তাকে খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা যে নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটাকেও বলা যাচ্ছে না। এদিকে জিশার উদ্বেগ দেখে অস্থির হয়ে আছে আদনানও। মাইল্ড অটিজমের শিকার আদনান অন্য সবার থেকে নিজেকে দূরেই রাখে, কারো খুব কাছে আসা বা স্পর্শ তার পছন্দ নয়। কিন্তু একমাত্র যে ব্যক্তি, তার জীবনে উষ্ণতা নিয়ে আসে সেই জিশার কী হয়েছে? কেন সে দূরে দূরে থাকছে।

এর মাঝেই একদিন বিয়ে করবে বলে আদনানকে প্রস্তাব দেয় জিশা। দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত যেই নিয়েছে, অমনি সব শেষ! নাকি বলব শুরু? শুরুই বলা যাক। গল্প এখান থেকে মোড় নেয় উত্তেজনা আর রহস্যের দিকে। সৃষ্টি হয় প্রশ্নের। বেরিয়ে আসে ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি থেকে শুরু করে দেশের আর্থিক ডিসব্যালান্সের কলকবজা। কিন্তু এসবের সঙ্গে জিশার কী সম্পর্ক? এই প্রশ্নের উত্তর কি পাবে আদনান? নাকি নিজের অজান্তেই অজানা কোনো ভয়ানক পথে এগোতে থাকবে সে? জানতে হলে দেখতে হবে 'সিন্ডিকেট'।

নির্মাণে শিহাব শাহীন নিজেকে অনেকবার প্রমাণ করেছেন। তবে এবার তিনি নিজেকে নতুন করে পরিচয় করালেন। হাতের মুঠোয় মোবাইল থাকায় হলিউড, বলিউড কন্টেন্টের সঙ্গে বাংলা কন্টেন্টের তুলনা করলে চলবে না যারা বলেন, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শিহাব শাহীন যে, আমরাও পারি। আধুনিকতা ও শৈল্পিক ধারার অসাধারণ মিলন ঘটেছে সিন্ডিকেটে। পর্বগুলো কিছুটা ধীরগতির মনে হলেও আপনাকে ধরে রাখবে।

অভিনয়ে মন কেড়েছেন আফরান নিশো ও নাজিফা তুষি। সমালোচকদের নজরে নতুন নিশোর জন্ম হয়েছে সিন্ডিকেটে।  এসপার্গাস  সিনড্রোমে আক্রান্ত এক ব্যক্তির বডি ল্যাংগুয়েজ, চোখের ভাষা, কথা বলার ধরন౼এসব রপ্ত করতে কমতি রাখেননি নিশো। সেই সঙ্গে প্রায় মেকআপহীন প্রতিটি শটে দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাসী নতুন নিশোকে চেনায়। সিরিজ শেষ হয়ে গেলেও আদনান চরিত্রটির প্রতিটি যে মায়া আর ভালোবাসা থেকে যায়, তা আফরান নিশোরই কৃতিত্ব।

নাজিফা তুষি এবার নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন অভিনয় দিয়ে। সিরিজে তাকে দেখাও যেন একটা প্রিভিলেজ ছিল। সাবলীল মেকআপে, তুষির চোখের ভাষা যেন আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। তবে কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতিমা হতে আসেননি তুষি, অভিনয়দক্ষতা দিয়ে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতেই এসেছেন, জিশার চরিত্র অন্তত তা-ই বলে।

নাসির উদ্দিন খান, রাশেদ মামুন অপু অভিনয়ে কোনো ফাঁক রাখেননি; বরং জায়গা করে রেখে গেছেন দর্শকের চিন্তায়। তবে আলাদা করে বলতে হয় রুপালি চরিত্রে অভিনয় করা শারমীন শর্মির। এই অভিনেত্রী অসাধারণ ন্যাচারাল অভিনয় করেছেন, যা খুবই ভালো লেগেছে। তাসনিয়া ফারিণকে সিরিজে খুবই সুন্দর লেগেছে। অভিনয় টাইমিং সেন্স তার খুবই ভালো, তবে এক্সপ্রেশনে আরও বৈচিত্র্য আনলে ভালো লাগবে।

সিরিজে আলাদা করে নজর কেড়েছে নিশো-তুষির কেমিস্ট্রি। 'কাজল চোখের মেয়ে, আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে তোমার চোখে চেয়ে...' সাদাত হোসাইনের কবিতাটি যেন এ দুজনের জন্যই লেখা। কী মায়া, কী আদর, কী গভীর আবেগে জিশা-আদনানের ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলেছেন নিশো-তুষি। যখনই তাদের দুজনকে একসঙ্গে দৃশ্যে দেখা গেছে, তখনই চোখে আরাম লেগেছে।

ক্যামেরার কাজ, বিজিএম, কালার গ্রেডিং সবই ছিল অসাধারণ। তবে কাহিনি আরেকটু দ্রুত এগোলে আর শেষের ক্লাইম্যাক্স দৃশ্য আরেকটু সাসপেন্স ধরে রাখলে ভালো লাগত। আশা করা যায়, নতুন সিজন যদি আসে, সেখানে এই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেবেন এই নির্মাতা।

রাজশাহীর সময়/এ