সুনামগঞ্জের প্লাবিত এলাকা থেকে এখনও বন্যার পানির দাগ মুছেনি, তার মধ্যেই টানা ভারী বৃষ্টিতে ফের আতঙ্কে দিন কাটছে বাসভাসিদের৷ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, বৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে৷
আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে কিছু মানুষ বাড়িঘরে ফিরে গেলেও এখনও বিশুদ্ধ খাবার পানি আর খাবারের সংকটের কারণে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ কাজ চলছে জোরকদমে৷ পানি না নামায় অনেক মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রেই রয়েছে৷
এর মধ্যেই জেলায় মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে৷ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে৷ ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে বর্ষণ হচ্ছে৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বলেন সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘আগে থেকেই মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাত হবে এই পূর্বাভাস ছিল৷ আগামীকাল ও পরশুও বৃষ্টি হবে৷”
‘এই সময়ে উজানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তবে আগের মতো টানা ভারী বর্ষণ হচ্ছে না৷ আগামী মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে আসবে৷’’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভারতের মেঘালয় ও সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হচ্ছে ফলে পানি কিছুটা বাড়ছে৷ বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আরও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷”
তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে৷ যদিও এখনও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে৷
‘‘বুধবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে ৮.৯৪ মিটার উচ্চতায় রয়েছে; তার মানে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ গত ১৫ দিন ধরেই ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে৷
গত ৪৮ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩৬ সেন্টিমিটার৷ অপরদিকে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে৷ এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭.৮০ মিটার অর্থাৎ, এখানে এখনও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে পানি৷
তাছাড়া সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও পুরাতন সুরমা নদীর পানিও গত দুদিন ধরে বাড়ছে বলে পাউবো জানিয়েছে৷
সুনামগঞ্জ সদরের সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নৌবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের সামনে সারাদিনই ভিড় করতে দেখা যায় বন্যাদুর্গত মানুষদের। নবীনগর থেকে ৪ দিন আগে আসা শেফালী হালদার জানান, বন্যার কারণে তাঁরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে লোকমুখে এমন কথা শুনে আসলেও এখানকার কর্মকর্তারা বলছেন এখানে কোনো ত্রাণ দেওয়া হয় না।
সুনামগঞ্জ সদরের সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নৌবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের সামনে সারাদিনই ভিড় করতে দেখা যায় বন্যাদুর্গত মানুষদের। নবীনগর থেকে ৪ দিন আগে আসা শেফালী হালদার জানান, বন্যার কারণে তাঁরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে লোকমুখে এমন কথা শুনে আসলেও এখানকার কর্মকর্তারা বলছেন এখানে কোনো ত্রাণ দেওয়া হয় না।
পাউবোর আবহাওয়া ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় ছাতকে ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত এবং সুনামগঞ্জ সদরে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ এ ছাড়া উজানেও ভারী বর্ষণ হচ্ছে৷ এ কারণে পানি বাড়ছে৷’’
এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোররাত পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণের ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ৷ বিভিন্ন এলাকার ভেসে ওঠা রাস্তাঘাট আবারও কিছুটা প্লাবিত হয়েছে৷
সুনামগঞ্জ হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, গত ১৬ জুন রাতের ভয়াবহ বৃষ্টি, ঝড় ও বজ্রপাত আমাদের ভিতরে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে গেছে৷ আমরা দেখেছি, কয়েক ঘণ্টায় সবকিছু চোখের সামনে ডুবে গিয়ে মানুষকে অসহায় করে গেছে৷
‘এখন এই সময়ে বৃষ্টি ও ঝড় হলে আমাদের বুক কাঁপে৷ কয়েকদিন আগে বন্যা মোকাবেলার কোনো প্রস্তুতি ছিল না৷ প্রশাসনের উচিত শক্ত প্রস্তুতি রাখা৷’’
এদিকে সুনামগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখনও ২৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪ হাজার বানভাসি মানুষ আছেন৷ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে৷