নরসিংদীর শিবপুরে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় তাছলিমা আক্তার (৩৫) নামে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী গর্ভপাতের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ সময় ছিনিয়ে নেয়া হয় স্বর্ণালংকারসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ও পুড়িয়ে দেয়া হয় একটি ঘর। রোববার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় তাছলিমার স্বামীর বড়ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে প্রতিবেশী চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম ওরফে সুমনসহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে শিবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গর্ভপাতের শিকার তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা তাছলিমা আক্তার শিবপুরের জয়নগরের পশ্চিমপাড়ার মোক্তার হোসেনের স্ত্রী। এ সময় আরও আহত হন তাছলিমার শাশুড়ি সুফিয়া বেগম (৬০)।
পরিবারটির সদস্যদের অভিযোগ, পৈতৃক সম্পত্তির বণ্টনসংক্রান্ত জটিলতায় প্রতিবেশী চাচাত ভাইদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটির বিরোধ চলছে। এর জেরে মাসখানেক আগে দুপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একাধিক সালিশ করেন। সালিশের রায় উপেক্ষা করে মোক্তার হোসেনসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম ওরফে সুমন। ওই মামলায় মোক্তার হোসেন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
রোববার রাত সোয়া ৯টার দিকে সুযোগ বুঝে সাইফুল ইসলাম সুমনের নেতৃত্বে অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জন মিলে মোক্তার হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা তছলিমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও একটি গৃহপালিত গরুসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ছিনিয়ে নেন এবং ওই ঘর ভাঙচুর করেন। এ সময় বাধা দিতে গেলে মোক্তার হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তছলিমার পেটে বেধড়ক কিল-ঘুষি ও লাথি মারা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে শাশুড়ি সুফিয়া বেগমকেও মারধর করেন তারা। পরে যাওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী অপর একটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করেন তারা।
এ সময় তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভান। পরিবারের সদস্যরা আহত তছলিমাকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালে সঙ্গে থাকা স্বজন ইয়াসমিন বেগম জানান, আহত তাছলিমা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা পরীক্ষা শেষে জানিয়েছেন, তলপেটে আঘাতের ফলে তার গর্ভপাত ঘটেছে। বর্তমানে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।