আজ ১৯ জুন (রবিবার) বিশ্ব বাবা দিবস। বিশ্বের ১১১ টির বেশি দেশে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। উক্ত দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের উদ্দেশ্যে মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন (এম.আর.এফ) এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে সকাল ১০:৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ল্যালীটি হাইকোর্টের মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়। উক্ত র্যালীতে উপস্থিত ছিলেন অত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক- মোঃ মাজেদ ইবনে আজাদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অত্র সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এইচ এম সোলায়মান চৌধুরী সুজন- কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা পরিষদ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আইন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট তানভীর হায়দার- আইন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ- এম এ সালাম প্রধান (দাদা ভাই), যুগ্ন আহ্বায়ক- লিটন গাজী, সদস্য সচিব- মোঃ ইয়াসিন, সদস্য- সাংবাদিক/আল বারু মুস্তাকিম নিবিড়, ইমদাদুল হক মিলন, ওবাইদুল্লাহ আল মাহবুব, আব্দুল বাছেদ, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব মোঃ শহিদুল ইসলাম মিরাজ, সদস্য মেহেদী হাসান ঝিনুক. গাজীপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউসার আহমেদ রুবেলসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য ঢাকা সহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে র্যালী ও আলোচনা সভার মাধ্যমে বাবা দিবস পালন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক এইচ এম সোলায়মান চৌধুরী সুজন বলেন, বাবা বটবৃক্ষের ছায়া। বাবা মানে নির্ভরতা। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে বাবা-মা দুজনই সন্তানকে লালনপালন করে বড় করে তোলেন। কারও দায়িত্ব কারও চেয়ে কম নয়। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরে নারী-পুরুষের আইনী বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই আইনী বৈষম্যের দ্রুত সংস্কার হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন তিনি আরও বলেন পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ, পিতাই পরম তপস্যা। সন্তানের প্রতি পিতা বা বাবার ভালোবাসা চিরকালের। এম এ সালাম প্রধান (দাদা ভাই) বলেন, পবিত্র কোরআনে বাবা-মায়ের সম্মান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে তাদের সঙ্গে উহ! শব্দ পর্যন্ত করো না। কোন জাতি, ভাষা, ধর্ম ও বর্ণ নয় বাবাই সবার পথপ্রদর্শক। মা দিবস বা বাবা দিবস তাদের চোখের সামনের পর্দাটি খুলে ফেলে পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে তাই বলা যায়, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে মা দিবস বা বাবা দিবসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
ইমদাদুল হক মিলন- বলেন সন্তানকে সুস্থ মানুষ গড়ে তুলতে বাবা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। আমরা মেডিকেল সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে দেখি পরিবারের সুস্থতা চিন্তা করতে গিয়ে কখন সে নিজে অসুস্থ হয়ে গেছে বলতেই পারেন না। যখন অসুস্থতা জানতে পারেন তখন তার সীমানা অতিক্রম। তখন সে আর্থিক টানাপোড়ন এবং পরিবারের চাওয়া পাওয়া চিন্তা করে নিজের সু-চিকিৎসা না করে তা গোপন রেখে আবার কাজ শুরু করেন। শুধু আড়ালে চোখের পানি সম্পদ হয়ে রয়।
মোঃ শহিদুল ইসলাম মিরাজ, পিতৃ দিবসে সন্তানদের সামনে সুযোগ আসে বাবাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানানোর। তাছাড়া পিতৃ দিবস পালনের ফলে সমাজে এবং পরিবারে বাবাদের যে অবদান তা যে সমাজ এবং নিজের সন্তনরা মুল্যয়ন করছে, এ বিষয়টিও বাবাদের বেশ আনন্দ দেয়। তাছাড়া অনেক সন্তানই আছে, যারা পিতা-মাতার দেখাশোনার প্রতি খুব একটা মনোযোগী নয়। তাই রাষ্ট্রীয় ভাবে আইন হওয়া দরকার।
কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক- মোঃ মাজেদ ইবনে আজাদ এর সভাপতিত্ব বক্তব্য আলোচনায় উঠে আসে প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস উদ্যাপিত হয়। আধুনিকতাকালে একক পরিবারে বাবার বা পুরুষের গুরুত্ব অপরিসীমা। অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনই উপার্জন করেন। কিন্তু কখনো আমাদের দেশের অনেক পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। বাবার উপার্জনেই সংসারের সব ব্যয়নির্বাহ হয়। সন্তানের শারীরিক, মানসিক দুই ধরনের বেড়ে ওঠার জন্য বাবা তার সবকিছু উজাড় করে দেন। অনেক পুরুষ নিজে আধ পেট খেয়েও মা, স্ত্রী, সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন। বাবাদের জন্যে কোন আইন নেই। তাই রাস্ট্রীয় ভাবে আইনগত দিক থেকে বাবাদের অধিকার নিশ্চিত করা হোক। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে পারিবারিক অশান্তি, কলহ, ডিভোর্স, সেপারেশন ইত্যাদি ব্যাপক হারে। যার প্রধান কিছু কারণগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে কর্ম ব্যাস্ততায় ঐ পরিবারে পুরুষটির সময়ের অভাব। পারিবারিক শান্তি ও বন্ধন অটুট রাখতে অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের সকল বেসরকাররি প্রতিষ্ঠান গুলোতে শুক্রবারের সাথে শনিবার বন্ধ ঘোষনা করার জোর দাবি জানান সরকারের কাছে।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন (এম.আর.এফ) বাবাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে এবং বাবাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য আইন-তৈরীর দাবি করা হয় বক্তারা বাবাদের ত্যাগ ও সমাজে উপেক্ষিত হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা আলোকপাত করেন। তারা বলেন বাবার কারণে প্রতিটি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায়। আর বাবা হলেন সন্তানের শ্রেষ্ঠ হিরো। যিনি নিজের জীবনের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের কে গড়ে তোলেন নিবিড় ভালোবাসায়।
উল্লেখ্য বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাবা দিবস পালন করা শুরু হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, আমেরিকায় পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম বাবা দিবস পালিত হয়। এ বিষয়ে ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উথাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। এই দিবসটির তাৎপর্য উপলব্ধি করে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ছয় বছর পর ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এটিকে আইনে পরিণত করে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন।