ছ’মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে আলাপ। তারপর প্রেম । তবে সেই প্রেমের টানে যে কুমীর-ভরা নদী পেরিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে আসা যায়, তা যেন কেউ ভাবতে পারছেন না! এ যেন গল্প হলেও সত্যি! ২২ বছরের কৃষ্ণা মণ্ডল বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে কালিন্দী নদী সাঁতরে হিঙ্গলগঞ্জ এসে পৌঁছেছেন কুমীরের ভয় তুচ্ছ করে। তবে দুঃখের বিষয়, এ প্রেমের পরিণতি তেমন সুখের হয়নি। অনুপ্রবেশের অভিযোগে মেয়েটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসবের মাঝে পালিয়ে গেছে তার প্রেমিক, নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা, ২৬ বছর বয়সি অভীক মণ্ডল।
কৃষ্ণার এই বেপরোয়া প্রেমের কথা জানতে পেরে সকলে বলছেন, এ যেন লায়লা-মজনুর কাহিনি। তফাত ওই শেষটুকুতেই। প্রেম হয়েও হইল না প্রেম।
জানা গেছে, কৃষ্ণা বাংলাদেশের শ্যামনগরের বাসিন্দা। সেখানেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। তাঁর স্বামীর নাম পরিমল মণ্ডল। কিন্তু প্রেমের পরে অভীককেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কৃষ্ণা। তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ সীমান্তে আসেন তিনি। কিন্তু ভারতে আসার পাসপোর্ট বা ভিসা ছিল না তার কাছে। তাই বাংলাদেশের সুন্দরবনের জঙ্গলঘেরা পথে নদী পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় ঢোকার পরিকল্পনা করেন ওই তরুণী।
তা করতে গেলে পেরোতে হবে নদী। কিন্তু সীমান্তরক্ষা বাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে তা কী করে সম্ভব! ১৮ দিন ধরে সুযোগ খুঁজছিলেন তিনি। পরে সুযোগ বুঝে কালিন্দী নদীতে নামে। ৬০ ফুট চওড়া নদী সাঁতরেই হিঙ্গলগঞ্জ পৌঁছেন তিনি। সেখান থেকে কৈখালি। একেবারে খালি হাতে এই অবধি পৌঁছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফোন চেয়ে অভীককে ফোন করেন কৃষ্ণা। এর পরে গত ৬ এপ্রিল অভীকের এক বন্ধু একটি গাড়ি নিয়ে কৈখালি গিয়ে নরেন্দ্রপুরে অভীকের বাড়িতে পৌঁছে দেন তাঁকে। সব মিলিয়ে ১১০ কিলোমিটার সড়কপথ পেরোনো হয় কৃষ্ণার।
এদিকে কৃষ্ণার শ্বশুরবাড়িতে খোজাখুঁজি শুরু হয়ে যায়। তাঁর স্বামী পরিমল (২১ মে) নরেন্দ্রপুর থানায় স্ত্রী কৃষ্ণার নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরেই নরেন্দ্রপুরের রানিয়া এলাকায় কৃষ্ণাদেবীর খোঁজ মেলে। অবশেষে রবিবার কৃষ্ণাকে অভীকের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। অভীক ও তাঁর পরিবারের কারও কোনও খোঁজ মেলেনি।
রানিয়ায় অভীকের প্রতিবেশীরা জানান, কৃষ্ণা ও অভীক কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করেন এপ্রিল মাসে। তার পরে সংসার শুরু করেন তাঁরা। এর মধ্যেই কৃষ্ণার নদী পেরিয়ে আসার কথা জানাজানি হয়ে যায় পাড়ায়। কৃষ্ণা তাঁদের বলেছিল, বিয়ের পর থেকে নিয়মিত মারধর করা হত তাঁকে। ছ’মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে অভীকের সঙ্গে তাঁর আলাপ। সেই আলাপ থেকেই ঘনিষ্ঠতা। তারপর বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেমের টানে চলে আসা।
পরিমল মণ্ডল অবশ্য এই মারামারির কথা স্বীকার করেননি, তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পরে তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন বিয়ের কথা। তার পরেই কলকাতায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, অভিযোগ মোতাবেক ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা রুজু হয়েছে কৃষ্ণার বিরুদ্ধে। তিনি এখন আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে রয়েছেন, জেল হেফাজতে। পুলিশ, জেলার, বিচারক সকলেই বিস্মিত এই ঘটনায়। প্রেমের টানে ঘর ছাড়ার ঘটনা খুব নতুন না হলেও, প্রেমের টানে ৬০ ফুট চওড়া উত্তাল নদী সাঁতার কেটে পেরোনোর ঘটনা রীতিমতো বিরল। কুমীরের আক্রমণে বিপদ হতে পারত, কপালজোরে বা প্রেমের জোরে তা হয়নি।