কলকাতা যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের লোভ দেখিয়েছিল বন্ধুরা। বাড়িতে রাজি করিয়ে সেই বন্ধুদের কাছে পাসপোর্ট আর কিছু টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন বাংলাদেশের রংপুরের বছর ছাব্বিশের তরুণী। গত ২১ এপ্রিল সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছলেও থাকা হয়নি। দুই বন্ধু ওই তরুণীকে বোঝায়, বিশাখাপত্তনম শহর কলকাতার থেকেও সুন্দর। অভিযোগ, ২৮ এপ্রিল বিশাখাপত্তনমে পৌঁছে এক ব্যক্তির কাছে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শেষে সুজাতা নগরের একটি ফ্ল্যাট থেকে স্থানীয় হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের সহযোগিতায় পেন্ডুরথি থানার পুলিশ মঙ্গলবার ওই তরুণীকে উদ্ধার করেছে। যার কাছে তরুণীকে বিক্রি করা হয়েছিল, গ্রেফতার করা হয়েছে সেই ব্যক্তিকেও।
এ দিন তরুণী বলেন, ‘‘বুঝতে পারছিলাম, আমাকে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। আমার দেশে এক দাদাকে লুকিয়ে ফোন করে সব জানিয়েছিলাম। হোয়াটসঅ্যাপে লাইভ লোকেশন অন করে দিয়েছিলাম। ওই দাদাই বাংলাদেশে হ্যাম রেডিয়োর অপারেটরদের মাধ্যমে এ দেশের হ্যাম অপারেটরদের জানান।’’ বাংলাদেশের হ্যাম অপারেটরেরা জানান, সোহেল রানা নামে এক যুবক সোমবার যোগাযোগ করে বলেন, তাঁর বোনকে ভারতে নিয়ে গিয়ে দেহ-ব্যবসার কাজে লাগাতে পাচার করা হচ্ছে। রাতেই এই বার্তা হাই ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়ো মারফত পৌঁছয় ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবে। হোয়াটসঅ্যাপের লাইভ লোকেশন দেখে বিশাখাপত্তনম পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করেন রেডিয়ো ক্লাবের সেক্রেটারি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস। সেখানকার হ্যাম অপারেটরদের কাছেও রেডিয়ো বার্তা পৌঁছয়।
হ্যাম অপারেটরদের এক জন রাতেই সুজাতা নগরের পাড়াটি চিহ্নিত করেন। সকালে তিনি ফের যান। একটি বন্ধ ফ্ল্যাটের বারান্দায় অন্তর্বাস ঝুলতে দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। পুলিশকে নিয়ে ঢুকে সেখান থেকে ওই বাংলাদেশি তরুণী-সহ এক জনকে পেন্ডুরথি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পাপিয়া ও তানিয়া নামে যে দুই বন্ধুর সঙ্গে তরুণী এ দেশে এসেছিলেন, তারাই বিশাখাপত্তনমে এক দালালের কাছে তরুণীকে বিক্রি করে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত দুই তরুণীর মোবাইল ট্র্যাক করে জানতে পেরেছে, এক জন হায়দরাবাদ ও অন্য জন মুম্বইয়ে আছে। সেখানকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া তরুণীকে একটি শেল্টার হোমে রাখা হয়েছে বলে জানান অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের এক আধিকারিক। তাঁকে দেশে ফেরাতে বাংলাদেশের কাউনিয়া থানার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
অন্য দিকে অম্বরীশবাবু বলেন, ‘‘ভাল লাগল, দ্রুত মেয়েটির খোঁজ মেলায়। উদ্ধার হওয়ার পরে ফোনে ওই তরুণী প্রথমেই ইদের শুভেচ্ছা জানালেন। এ বার ওঁকে ঘরে ফেরানোর পালা।’’