২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৭:২৮:০১ পূর্বাহ্ন


শবে কদর যেভাবে উদযাপন করবেন
ইসলাম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২২
শবে কদর যেভাবে উদযাপন করবেন ফাইল ফটো


শবে কদর মুসলিম জাতির প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহ এ রাতকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে শবে কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সুরা কদর : ১-৫)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই প্রকৃত কল্যাণ বঞ্চিত হলো।’ (সুনানে নাসাঈ : ২১০৮)।

শবে কদরের বরকত লাভে পূর্বসূরি আলেমরা কিছু কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন—

দেহমনের পবিত্রতা: আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভের অন্যতম শর্ত হলো, শারীরিক ও আত্মিকভাবে পবিত্রতা লাভ করা। পুতঃপবিত্র মহান আল্লাহ অপবিত্রতা পছন্দ করেন না। এ জন্য ইসলামি শরিয়তে নামাজসহ বহু ইবাদতের জন্য পবিত্রতাকে শর্ত করেছেন। আত্মিক ও দৈহিক পবিত্রতার ব্যাপারে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন। তিনি পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা বাকারা : ২২)।

বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা: আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি লাইলাতুল কদর কবে, সেটা জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী করব?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি বোলো—আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি : ৩৫১৩)।

আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা: শবে কদরের বরকত লাভে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করবে। তা এভাবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং আমাকে মহিমান্বিত রাতের বরকত থেকে বঞ্চিত করবেন না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি তার সঙ্গে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে, আমি তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। যদি সে আমাকে মজলিসে স্মরণ করে, আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক বাহু অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে।’ (বোখারি : ৭৪০৫)।

কোরআন তেলাওয়াত করা: যেহেতু শবে কদরের মর্যাদার সঙ্গে কোরআন নাজিলের বিষয়টি সম্পর্কিত, তাই বুজুর্গ আলেমদের মতে কদরের রাতে কোরআন তেলাওয়াত করা তাৎপর্যপূণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কদর : ১-৩)।

রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ: রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ দোয়া কবুলে সহায়ক। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ না করা হলে সেই দোয়া আসমান ও জমিনের মধ্যে স্থগিত থাকে। সেই দোয়া আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না।’

তাহাজ্জুদ আদায়: তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এ দশকে রাত জেগে ইবাদত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসুল (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন)। রাত জেগে ইবাদত করতেন। পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ (বোখারি : ২০২৪)।

ইতেকাফ: ইতেকাফ শবে কদরের বরকত লাভে সহায়ক। কেননা, ইতেকাফকারী জাগতিক সব ব্যস্ততা পেছনে ফেলে মহান আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারে। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন।’ (বোখারি : ২০২৬)।

রাজশাহীর সময়/এইচ