সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে কয়লা পাচাঁরের সময় চোরাই কয়লার গুয়ায় মাটি চাপা পড়ে অনিক মিয়া (১৯) নামের এক স্কুল ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে চোরাই কয়লার গ্রাম থেকে ৬ মে.টন চোরাই কয়লা জব্দ করেছে।
এঘটনার প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় সীমান্তের ৪-৫জন চোরাকারবারীর নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত আসামী দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গত রবিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট ও টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা ঈদগাঁ মাঠ সংলগ্ন ভারত সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার ভিততে অবস্থিত চোরাই গুহা দিয়ে সোর্স ইসাক মিয়া, কালাম মিয়া ও জিয়াউর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে কয়লা পাচাঁরের সময় টেকেরঘাট খনিপ্রকল্প স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণী ছাত্র অনিক মিয়া (১৯) মাটি চাপা পড়ে। এঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর চোরাকারবারীরা সবাইকে ম্যানেজ করে মাটি খুড়ে ওইদিন দুপুরে ওই স্কুল ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। কিন্তু এঘটনার পর বিজিবির পক্ষ থেকে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি আইনগত কোন পদক্ষেপ। একারণে একাধিক মামলার আসামী সোর্স পরিচয়ধারী ইয়াবা কালাম মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া ও ইসাক মিয়ার নেতৃত্বে ভারত থেকে কয়লা ও মাদক পাচাঁর বন্ধ না হয়ে আরো বেড়ে যায়।
এমতাবস্থায় গতকাল সোমবার (১৮ এপ্রিল) ভোরে সোর্সরা টেকেরঘাট সীমান্তের রজনী লাইন, বুরুঙ্গাছড়া, ভাংগারঘাট, বড়ছড়া ও বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট এলাকা দিয়ে পৃথক ভাবে প্রায় ১শত মে.টন চোরাই কয়লা ও বিপুল পরিমান মদ পাচাঁর করে বড়ছড়া শুল্কষ্টেশনের কয়েকটি ডিপুসহ পাশর্^বর্তী লাকমা, লালঘট, বিন্দারবন্দ ও বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত চোরাই কয়লার গ্রাম হিসেবে পরিচিত দুধের আউটা গ্রামের একাধিক বসতবাড়িতে নিয়ে মজুত করে রাখে।
এমন সংবাদ পেয়ে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চোরাই কয়লার গ্রাম দুধের আউটায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১লাখ টাকা মূল্যের ৬ মে.টন অবৈধ কয়লা জব্দ করে। এসময় সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা সুকৌশলে মাদক নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার সাংবাদিকদের বলেন- রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কয়লা ও মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর বন্ধ করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যে কোন ধরনের অন্যায় কর্মকান্ড প্রতিরোধ করার জন্য আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি।
উল্লেখ্য, সোর্স পরিচয়ধারীদের নেতৃত্বে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা, পাথর, কাঠ, বিড়ি, গরু, অস্ত্র ও মাদককদ্রব্য বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করতে গিয়ে এপর্যন্ত উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তে ১৮জন, চাঁনপুর সীমান্তে ৫জন, টেকেরঘাট সীমান্তে ৮জন, বালিয়াঘাট সীমান্তে ১২জন, চারাগাঁও সীমান্তে ৭জন ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে ৪জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।