২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৯:০৮:৩৯ অপরাহ্ন


আলোচিত মাসুদ হত্যার ঘটনায় মামলা; এজহারে নেই কোনো নাম
রাবি প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৯-২০২৪
আলোচিত মাসুদ হত্যার ঘটনায় মামলা; এজহারে নেই কোনো নাম আলোচিত মাসুদ হত্যার ঘটনায় মামলা; এজহারে নেই কোনো নাম


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও রাবি মেডিকেল সেন্টারের সেকশান অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে হত্যার ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় মামলা করা হয়েছে।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিহতের ভাই মো. বেহেস্তি (৩৫) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে কোনো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিবাদী করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জুবেরী অফিসার্স কোয়াটার্স থেকে তার ব্যবহৃত স্কুটিযোগে নবজাতক সন্তান ও অসুস্থ স্ত্রী'র ওষুধ নেয়ার জন্য মতিহার থানাধীন বিনোদপুর বাজারস্থ ফার্মেসিতে গেলে অজ্ঞাতনামাকে বা কারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে অনুসরণ করে। পরে তাকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বিনোদপুর বাজার হতে অজ্ঞাতনামা কে বা কাহারা কৌশলে তাকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

তারা তাকে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানাধীন অজ্ঞাত স্থানে উপর্যুপরি প্রহার করতঃ মুমূর্ষু অবস্থায় জনৈক এক ব্যক্তি মতিহার থানায় খোঁজ নিতে আসে যে, রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সময়ে কোন হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে কি না। মতিহার থানায় কোন হত্যা মামলা না থাকায় ওই জনৈক ব্যক্তির নির্দেশনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ও উত্তেজিত ছাত্র-জনতা রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মাসুদকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য থানায় নিয়ে যায়।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ফ্লোরে তাকে শোয়ায়ে দিয়ে জনৈক ছাত্র সমন্বয়কের নেতৃত্বে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা ঘিরে ফেলে। উত্তেজিত ছাত্র-জনতা কর্তৃক তাকে বোয়ালিয়া মডেল থানায় নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হয়। উক্ত বহুল প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ হতে দেখা যায় তাকে জনৈক সমন্বয়কের নেতৃত্বে বিনোদপুর বাজারস্থ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় অটোরিকশা হতে নামিয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ফ্লোরে রাখা হয়। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় তিনি এক গ্লাস পানির জন্য আকুতি মিনতি করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ছাত্র-জনতা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে পানি পান করানো থেকে বিরত রাখে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায় যে, মৃত্যুর মুখে পতিত মাসুদকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে তাকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে বোয়ালিয়া মডেল থানায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য উত্তেজিত ছাত্র-জনতা বোয়ালিয়া মডেল থানা ঘেরাও করে এবং ওসির সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়ায়। পরে ওসি তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহয়তায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত তার এক্সরে করে এবং তাকে ৩১ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স তাকে বাঁচানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টা ৩ মিনিটে হাসপাতালের ৩১নং ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য যে, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ পূর্ব-শত্রুতার জের ধরে

পরিকল্পিতভাবে তাকে বেধড়ক মারধর করতঃ তাহার মৃত্যু ঘটায়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ ইতোপূর্বে ২০১৪ সালেও তাকে মারধর করতঃ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ডান পা হাঁটুর নিচ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং তখন থেকেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ তাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে আসতেছিল।

থানা সূত্রে জানা যায়, পেনাল কোড-১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলার নাম্বার ০৮।

মামলার বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম বলেন, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ হত্যার ঘটনায় তার ভাই বাদী হয়ে মামলার এজহার দায়ের করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

উল্লেখ্য, নিহত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ কেন্দ্রীয় ও রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর গ্রামে। তার বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি রাবি মেডিকেল সেন্টারের স্টোর কিপার পদে কর্মরত ছিলেন। এরপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী অফিসার্স কোয়াটার্স-এ স্ব-পরিবারে বসবাস করে আসছিলেন।