বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা)’র নেতারা। অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখলকারী শেখ হাসিনাকে ক্ষমাতচ্যুত করায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুনা'র জাতীয় কমিটির সভাপতি হারুন ও. রশিদ। তিনি বলেন, গত ৫ আগষ্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। উক্ত আন্দোলনে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অভিবাদনও জানিয়েছেন মুনা'র সভাপতি হারুন ও. রশিদ।
শনিবার (১০ আগষ্ট) যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ার কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত প্রবাসে মুসলমানদের সবচেয়ে বৃহৎ মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা)’র ৭ম বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ‘ইসলাম শান্তি ও মানবতার জন্য ন্যায়বিচার’ এ শ্লোগানে প্রবাসে ৯ আগষ্ট শুরু হওয়া তিন দিনের এ সম্মেলন শেষ হয়েছে ১১ আগস্ট দুপুরে। এবারের মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা)’র বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাভাষী প্রতিটি বক্তার মুখেই বারবার উঠে এসেছে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি কথা। প্রায় ২০ হাজার ধর্মপ্রান প্রবাসী মুসলমান এবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বলে মুনা'র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
হারুন ও. রশিদ আরও বলেন, ইমাম ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতায় ও আল্লাহর অশেষ রহমতে বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও বিশাল আকারের মুনা কনভেনশন বাস্তবায়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিন দিনব্যাপী ওই কনভেনশন বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটির মাঝে ব্যক্তি এবং সমাজ গঠনে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আমরা মুনা ন্যাশনাল সংগঠনের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে এবং আপনাদের মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, মুনা আমেরিকার একটি দাওয়াতি ও সামাজিক সংগঠন। মানুষের ব্যক্তিগত নৈতিক ও সামাজিক মানোন্নয়নর জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত হয় মুনা। এই সংগঠনটি ১৯৯০ সালে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে কর্পোরেশন ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে মুনা আমেরিকার ৪৮টির বেশি অঙ্গরাজ্যে কর্মতৎপরতা পরিচালনা করছে।
হারুন অর রশীদ গাজার মুসলমানদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ৪০ হাজার মানুষের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। আমাদেরকে সকল ভেদাভেদ ভূলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। আমাদেরকে জাগতে হবে। মুনা কোন রাজনীতিক সংগঠন নয়। আমরা মুসলমান এবং অমুসলমানদের কাছে কুরআনের দাওয়াত দিয়ে থাকি। আমাদের পাঁচ দফা কর্মসূচি শুধু মুসলিম তথা ইসলামে বিশ্বাসীদের জন্য নয়, এটা গোটা মানব গোষ্ঠীর উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে। মুনা শতকরা ১০০ ভাগ কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণ করে। মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও রাসুল (সা:) প্রদর্শিত সুন্নাহর কল্যাণকর পতাকা প্রতিটি হৃদয়ে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে পৌঁছে যাক মুনা এই বিশ্বাস ধারণ করেই কনভেনশনে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে। মুনার এই কাজে ইমাম ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আল কোরআন পথনির্দেশ করে গোটা মানব জাতিকে। কল্যাণকর ও নির্ভুল পথ পরিদর্শন করে পথভ্রান্ত দিকহারা মানবতাকে। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন, মানব দেহের অভ্যন্তরে লুকায়িত অন্তর বিন্দু থেকে সৃষ্টি লোকের বিশাল বিস্তৃত মানব সম্পর্কিত প্রতিটি স্তরে বিশ্ববাসীর কল্যাণে এক নির্ভুল গাইড হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে এই মহাগ্রন্থ আল কুরআন। মুনা গত বছর প্রায় ৭৫ হাজার কুরআন বিলি করেছে এবং এ কাজ অব্যহত রাখছে। আপনারা যে কেউ এ কাজে অংশগ্রহন করতে চাইলে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো।
ইমাম দেলোয়ার হোসাইন তাঁর মুল্যবান বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে জুলুমবাজ শাসক পরাজিত হয়েছে এর পেছনে ছিলো ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ। তারা অন্যায়, অবিচার, অবিবেচকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো বলেই একটি জুলুমবাজ সরকারের দ্রুত পতন সম্ভব হয়েছে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে কোরআনের আলোকে ঐক্যবব্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার তাঁর মুল্যবান বক্তব্যে বলেন, পৃথিবীতে ধর্ম নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই। কোন মুসলমান কখনই ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারেন না। মহানবীকে অনুস্মরণকারী সাহাবীরা নিশ্চয় বেহস্তী হবেন। শুধু ঈমান থাকলেই নবীজীর (সা:) সাথে থাকলেই সাহাবী হওয়া যায় না। সাহাবীর মর্যাদা পাওয়া খুব কঠিন কাজ। সাহাবীদের জীবন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি ইসলামের দাওয়াত বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুনাকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে তিন দিনের আলোচনায় অংশ নেন ড. ইয়াসির কাধি, ইমাম ড. ওমর সুলেমান, ইমাম সিরাজ ওয়াহহাজ, মুফতি হুসাইন কামানি, শন কিং, ইমাম সুলেমান হানি, হারুন ও. রশিদ, শায়খ আব্দুল নাসির জাংদা, উস্তাদা তাইমিয়া জুবায়ের, ইমাম ড. মোহাম্মদ আবু তালেব, ড. আলতাফ হোসেন, ইসমাহান আবদুল্লাহি, ওসামা আবু ইরশাইদ, ড. সাইয়েদুর রহমান চৌধুরী, আবদুল রহমান খান, ড. জাহিদ বুখারী, ইমাম দেলোয়ার হোসেন, ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার, ড. তাহির ওয়াইট, ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ব্যারিস্টার হামিদ হোসেন আজাদ, ইমাম বাবা গালে ব্যারি, ড. উসামা আল-আজামী, শেখ এ টিডিয়ান ডায়ালো, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহি, নিহাদ আওয়াদ, আবু সামিহা সিরাজুল ইসলাম, ড. হাসান আবদেল সালাম, ড. আয়মান হাম্মুস, ডা. সাবিল আহমেদ, ডা. মাহেরা রুবি, ডা. আবুদুল্লাহ বালদি, আরমান চৌধুরী, সিপিএ, ডা. মহসিন আনসারী, আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন পেনসেলভেনিয়া ষ্টেট সিনেটর নিখিল সাবা এবং মার্কিন রাজনীতিক তারেক খান প্রমুখ।
শনিবার রাতে শেষ পর্বে আবৃত্তিকার তোফাজ্জল হোসেন খান ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মনসুর এবং ডা. আতাউল ওসমানী ও ইকবাল হোসেন জীবনের নেতৃত্বে উম্মাহ শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা দলীয় ও একক ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও রেনেসাঁকালচারাল গ্রুপ, আটলান্টিক কালচারাল গ্রুপ, নায়াগ্রা কালচারাল গ্রুপ এবং মুনা চিল্ডরেন উইং-এর নতুন প্রজন্মের শিল্পীরাও এতে অংশ নেন।
কনভেনশনের বিভিন্ন পর্বপরিচালনা করেন মুনা’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন ও. রশিদ, কনভেনশনের কনভেনর আরমান চৌধুরী, সোস্যাল সার্ভিস-এর পরিচালক হাফেজ আব্দুল্লাহ আল আরীফ, মিডিয়া ও কালচালার বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান গাজী ও অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মনসুর প্রমুখ।