দু’দিন আগে ভারতের সর্বদক্ষিণের রাজ্য কেরালার ওয়ানাড় জেলার মেপ্পেদি গ্রামে যে ভয়াবহ ভূমিধস ঘটে গেল, তার জের শিগগরই শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২৮২ জনের মৃতদেহ।
এবং এখনও সেখানে নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ২৪০ জন মানুষ। কেরালার রাজ্য প্রশাসনের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএনআইসহ বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
গত ৩০ জুলাই মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক ভূমিধস ঘটে মেপ্পেদির বিস্তৃত পাহাড়ি অঞ্চলে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত মোট তিনবার ভূমিধস ঘটেছে ওই এলাকায়। ভূমিধসে মেপ্পেদির পাশের শহর চুরালমালাও প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
কেরালার এই অঞ্চলটি চা এবং এলাচ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এখানকার চা-এলাচ বাগানগুলোতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি বাইরের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরাও কাজ করতেন। শালিয়ার নদীর তীরে অস্থায়ী তাঁবু/ কুঁড়েঘরে বসবাস করতেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জনান, এই শ্রমিকদের অনেকেই ভূমিধসের পর নদীর স্রোতে ভেসে গেছেন। এছাড়া ব্যাপক স্রোতের চাপে ভেঙে পড়েছে শালিয়ার নদীর ওপরের সেতুটিও।
ওয়ানাড় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেতু ভেঙে পড়া ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় প্রথম দিকে উদ্ধার তৎপরতায় বেশ বিলম্ব ঘটেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এখনও উদ্ধারকাজে কাঙ্ক্ষিত গতি আনা যাচ্ছে না।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও যতখানি সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে চলছে উদ্ধারকাজ। এক্ষত্রে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের সহযোগিতা করতে এসেছেন সাধারণ জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনানাই বিজয়ন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৫০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯০ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়শিবিরে। ঘটনাস্থলের আশেপাশে এ পর্যন্ত ৮২টি অস্থায়ী আশ্রয়শিবির স্থাপন করা হয়েছে।
“আমাদের উদ্ধার তৎপরতা পুরোদমে চলছে। কেরালার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় আকারের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এর আগে কখনও আমরা এত বড় মাত্রার বিপর্যয় দেখিনি,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেন বিজয়ন।
গত লোকসভা নির্বাচনে ওয়ানাড় আসনে জয় পেয়ে সেখানকার এমপি হয়েছিলেন কংগ্রেস ও ভারতের পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। এবারের নির্বাচনেও জয় পেয়েছেন তিনি। তবে এর পাশাপাশি রায় বেরিলি আসনেও জয় পাওয়ায় এই আসনটি সম্প্রতি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
কংগ্রেসের মুখপাত্র কে সুরেশ জানিয়েছেন, আজ উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন রাহুল এবং তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।