২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৮:২১:১৯ পূর্বাহ্ন


নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভেনেজুয়েলার পথে পথে বিক্ষোভ
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৭-২০২৪
নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভেনেজুয়েলার পথে পথে বিক্ষোভ


ভেনেজুয়েলা বিতর্কিত নির্বাচন ও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নেমে এসেছে বিক্ষোভকারীরা। তাদের দমন করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় হাজার হাজার মানুষ মধ্য কারাকাসের রাস্তায় নেমে আসে, কেউ কেউ শহরের চারপাশের পাহাড়ি এলাকা কিংবা বস্তি থেকে কয়েক মাইল পথ হেঁটে রওয়ানা দেন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে।

 

নিকোলাস মাদুরো নিজেকে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী দাবির পরদিনই ভেনিজুয়েলার রাজধানীতে এই বিক্ষোভ শুরু। তবে বিরোধী দল মাদুরোর বিজয়ের ঘোষণাকে জালিয়াতি বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে, বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস অন্তত ৭৩ দশমিক দুই শতাংশ ভোট পেয়ে নিশ্চিতভাবে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের আগে জনমত জরিপেও স্পষ্ট জয়ের আভাস ছিল বিরোধী পক্ষের।

গত ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট মাদুরো। তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশটির অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করে। যা নিয়ে দেশে অসন্তোষও তৈরি হয়। পরে প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গঞ্জালেসের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলি একত্রিত হয়েছিল। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ভোটের কেন্দ্রভিত্তিক রেকর্ড প্রকাশের আহবান জানিয়েছে।

 

সোমবার ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভকারীরা যখন রাস্তায় নেমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে যাচ্ছিল তখন তাদরে ছত্রভঙ্গ করতে কারাকাসের রাস্তায় জল কামানসহ সামরিক বাহিনী এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিতি ছিল। এসময় তারা স্বাধীনতার পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকে। সেই সাথে সরকারের পতনেরও আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।

 

প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজগুলোয় দেখা যাচ্ছে, হাইওয়েতে টায়ার জ্বলছে এবং রাস্তায় বিপুল সংখ্যক মানুষ, মোটরসাইকেল থেকেই পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে। কোনো কোনো এলাকায় প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পোস্টার ছিঁড়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। রাস্তায় জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে টায়ার, গাড়ি এবং আবর্জনাও।

 

সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সশস্ত্র পুলিশ, সামরিক বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একই সময় তারা শহরের চারপাশের বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয়। বিবিসি এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলেছে যারা ‘লা লুচা’ নামের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে এসে এই বিক্ষোভে অংশ নেয়।

 

পাওলা সারজালেজো নামের ৪১ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ভয়াবহ জালিয়াতি! ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে আমরা বিজয়ী হয়েছি কিন্তু তারা একই কাজ আবারও করলো। আমাদের বিজয় কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলছিলেন, “আমরা তরুণদের জন্য, আমাদের দেশের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ চাই।”

 

সারজালেজার পিতা মিগুয়েল তখন বলছিলেন, “তিনি নির্বাচনে হেরেছেন, এখন তার থাকার কোনো অধিকার নেই।” তিনি যোগ করেন, “আমরা তরুণদের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ চাই, কারণ তা না হলে আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। যদি যুবকরা সবাই চলে যায়, তখন ভেনেজুয়েলায় শুধু বয়স্ক মানুষই থাকবে।”

 

নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভেনেজুয়েলার পথে পথে বিক্ষোভছবির উৎস,REUTERS

ছবির ক্যাপশান,নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভেনেজুয়েলার পথে পথে বিক্ষোভ

গায়ে ভেনেজুয়েলার পতাকা বেঁধে এসেছিলেন ক্রিস্টোবাল মার্টিনেজ। তিনি মনে করেন, এই নির্বাচনটি ছিল একটি "প্রতারণা"।

 

তিনি বলেন, “লা লুচা এবং আশেপাশের এলাকার বেশিরভাগ তরুণরা এমন একটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছে যা তরুণদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকেই বেকার এবং অধিকাংশই পড়াশোনা করে না।” “সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের অনেক অসন্তোষ ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছিল,” বলছিলেন তিনি।

 

তার দাবি, প্রেসিডেন্ট মাদুরো দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও দেশে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রেসিডেন্ট শ্যাভেজ মারা যাওয়ার পর মাদুরোর নেতৃত্বে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। মুষ্টিমেয় বয়স্ক সুবিধাভোগী শ্রেণি যারা সরকারি রেশন, বোনাসসহ নানা সুবিধা পায় তাদের অভিযুক্ত করেন তিনি।

 

এক যুবক বলছিলেন, “আমরা একটি পরিবর্তন চাই, আমরা আমাদের দেশের থেকে একটি ভালো চাকরি চাই।” মার্টিনেজ বলেছিলেন, “আজ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে অন্যান্য দেশের লোকেরা আমাদের সাহায্য করতে চান, যাতে আগের মতো বিপর্যয় না ঘটে।”

 

মাদুরো বিরোধীদের ফলাফল নিয়ে এমন বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, “এই সমস্যায় যে আমরা এই প্রথম পড়েছি তা না নয়, এর আগেও আমাদের নিয়ে সমালোচনা করেছিল তারা।” “তারা ভেনেজুয়েলায় আবারও ফ্যাসিবাদী এবং চরিত্রের অভ্যুত্থান চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে,” বলছিলেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো।

 

ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল সতর্ক করে বলেছেন, বিক্ষোভের অংশ হিসাবে রাস্তা অবরোধ করা বা বিশৃঙ্খলা করে আইন ভাঙলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নির্বাচনি সামগ্রী ধ্বংস করাসহ সহিংসতার অভিযোগে এই বিক্ষোভ চলাকালে ৩২ জনকে আটক করা হয়েছে।

 

এদিকে ঊর্ধ্বতন মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেছেন যে, ঘোষিত ফলাফল দ্রুত গণনা এবং যথাযথভাবে যাচাই না করে যেভাবে ফলাফলে ঘোষণা করা হয়েছে তা মানুষের প্রকৃত ভোটের সাথে বৈপরীত্য থাকতে পারে। “এটিই আমাদের মূল উদ্বেগের জায়গা,” যোগে করেন তারা।

 

তাই আমরা ভেনেজুয়েলার নির্বাচনি কর্তৃপক্ষকে প্রকৃত ডেটা প্রকাশ করতে বলেছি, যা মানুষের প্রদত্ত ভোটের প্রতিফলন ঘটায়। তবে, ভেনিজুয়েলার প্রতি তাদের নিষেধাজ্ঞা নীতির ফলাফল কী হবে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) সোমবার ঘোষণা করেছে যে, ভেনেজুয়েলার এই ফলাফল নিয়ে স্থায়ী কাউন্সিলের বুধবার একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।