সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার হিসেবে পরিচিত তাহিরপুর উপজেলা। অবহেলিত এউপজেলার শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবতীদের বেকারত্ব দূর করার জন্য সরকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাতে নিয়েছে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ নামের একটি মহৎ প্রকল্প। কিন্তু এই প্রকল্পে নানান অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- ২০২১সাল থেকে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। সরকারের এই মহৎ প্রকল্প চলবে ২০২৩সাল পর্যন্ত। এজন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাহিরপুর উপজেলার ৫শত জন লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা এই ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের পছন্দ মতো উপজেলার বিভিন্ন অফিস-্আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাজ হচ্ছে সরকারী অফিস-আদালত ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দফতরে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করা। আর এই কাজের জন্য প্রত্যেককে সরকার কর্তৃক প্রতি মাসে সম্মানিত ভাতা বাবাদ দেওয়া হচ্ছে ৬হাজার টাকা। আর এই টাকা নিজ একাউন্টের মাধ্যমে মাসের প্রথম সপ্তাহে নিয়োগ প্রাপ্তরা উত্তোলন করতে পারে। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি ভাগই তাদের দায়িত্ব সঠিক পালন করছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।
এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- সরকারী নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা স্ব-শরীরে তাদের পছন্দের কর্মস্থলে হাজির হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তার আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সহযোগীতা করবে। কিন্তু বেশির ভাগ নিয়োগ প্রাপ্ত নারী ও পুরুষরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত হয় না। আবার অনেকেই কর্মস্থলে হাজির হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যায়। কারণ বেশি ভাগ পুরুষরা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকুরীর সাথে জড়িত। আর নারীরা ঘর-সংসার নিয়ে মহাব্যস্থ। তারা তথ্য গোপন করে প্রভাবখাটিয়ে এই ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ প্রকল্পে যোগদান করেছে। এজন্য মাস শেষে তাদের প্রতিষ্টানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে তারপর বেতন-ভাতা উত্তোলন করে। তাদের এই অনিয়মের তদারকি করার মতো দায়িত্বশীল কেউ না থাকার কারণে উপজেলার প্রকৃত শিক্ষিত দরিদ্র বেকার যুবক-যুবতীরা সরকারের এই মহৎ সেবা থেকে রয়েছে বঞ্চিত। আর স্বচ্ছল ও প্রভাবশালীরা এই ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ প্রকল্পের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দিনদিন আরো সচ্ছল হচ্ছে। এর ফলে উপজেলার সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনা। আর চরম হতাশায় ভোগছে উপজেলার প্রকৃত শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবতীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান- ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ প্রকল্পটি সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই প্রকল্পে প্রকৃত শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবতীরা নিয়োগ পেলে সবাই উপকৃত হত। কিন্তু একাধিক পেশার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার কারণে তারা তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারছেনা। তাই এব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্ঠি কামনা করছি।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন- ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ প্রকল্পে যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমাদের যুব উন্নয়ন অফিসসহ বিভিন্ন সরকারী দফতরে কাজ করছে। তবে অনেকের ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে তারা ঠিক মতো কাজ করেনা, অনেকেই কর্মস্থলে উপস্থিত হয়না। তাই অনিয়মকারী ব্যক্তিদের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যদি মাস শেষে তাদেরকে প্রত্যয়ন পত্র না দেন, তাহলে আমরা বেতন-ভাতা বন্ধ রাখাসহ ওদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সুবিধা হতো। কারণ আমাদের যুব উন্নয়ন কার্যালয়ে লোকবল সংকট রয়েছে। তাই ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ প্রকল্পের তদারকি করতে সমস্যা হচ্ছে।
রাজশাহীর সময় / এম আর