০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৮:১৫:৩২ পূর্বাহ্ন


সৌদি আরবে কারখানায় আগুনে পুড়ে আত্রাইয়ের তিনজন নিহত
কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ):
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৭-২০২৪
সৌদি আরবে কারখানায় আগুনে পুড়ে আত্রাইয়ের তিনজন নিহত সৌদি আরবে কারখানায় আগুনে পুড়ে আত্রাইয়ের তিনজন নিহত


সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার তিনজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সৌদির স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ আগুনের এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।

নিহতদের মধ্যে আত্রাই উপজেলার শিকারপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে এনামুল হোসেন (২৫),দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের কবেজ আলীর ছেলে শুকবর রহমান (৪০) ও তেজনন্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন (৪০)। 

এঘটনার পর থেকে নিহতদের গ্রামের বাড়ী বাড়ী চলছে শোকের মাতম। লোকজন,পাড়া প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংখিরা ভির করে আছেন বাড়ীগুলোতে। গ্রাম জুরেই যেন কান্না আর শোকের রোল পরে গেছে। উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুত হোসেন বলেন,তার শ্বশুড় কৃষি শ্রমীক ছিলেন। গত আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১শতক জায়গা বিক্রি করে তার সাথে ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি। শুকবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামিম হোসে প্রতিবন্ধি। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ীর তিন শতক জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নেই। কিভাবে শ্বাশুড়ী,শ্যালোকদের নিয়ে চলবেন তা নিয়ে ঘোর বিপাকে পরেছেন। ম্বশুড় শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জণক্ষম ব্যক্তি।

তেজনন্দি গ্রামের নিহত ফারুকের স্ত্রী-দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেননা। বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন। ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান,চাচা ফারুক হোসেন গার্মেন্টে কাজ করতেন। গত প্রায় ৬বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পরে যায়। গত প্রায় ৮মাস হচ্ছে স্থায়ীভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন কারখানায় আগুনে ফারুক নিহত হয়েছেন। 

শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান, এনামুল গার্মেন্ট শ্রমীক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ঘর বাঁধতে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ী নির্মান করছেন। বাড়ীর কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা তার ভাগ্যে সইলনা। বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে মারা যাবার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে পরেছেন। কিছুতেই যেন তাদেরকে বুঝ দিয়ে থামানো যাচ্ছেনা। 

নিহতদের তিন পরিবার থেকেই দ্রæত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এব্যাপারে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সি তা বিশ্বাস বলেন, সৌদি আরবে আগুনে পুরে তিনজনের নিহতের খবর পেয়েছি। তাদের পরিবারের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। এছাড়া নিহতদের মরদেহ দেশে ফেরাতে এবং সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা থাকলে তা সহায়তা করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।