১৬ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৪৯:৫০ পূর্বাহ্ন


তাহিরপুর সীমান্তের কোটিপতি সোর্স ও গডফাদার অধরা: বেড়েছে চোরাচালান
মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া (সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি):
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৬-২০২৪
তাহিরপুর সীমান্তের কোটিপতি সোর্স ও গডফাদার অধরা: বেড়েছে চোরাচালান তাহিরপুর সীমান্তের কোটিপতি সোর্স ও গডফাদার অধরা: বেড়েছে চোরাচালান


সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সোর্স ও তাদের গডফাদার সিন্ডিকেডের মাধ্যমে প্রতিদিন ভারত থেকে ওপেন মাদকদ্রব্য, কয়লা, চুনাপাথর, চিনি, পেয়াজ, গরু, ঘোড়া, বাঁশ, কাঠ ও বিড়িসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে চাঁদাবাজি করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত অবৈধ কয়লা বোঝাই ৫টি নৌকা আটককের পর ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাই সীমান্ত চোরাকারবারীদের গডফাদার ও সোর্স বাহিনীকে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২২ জুন) ভোরে উপজেলার বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের সুন্দরবন ও লামাকাটা এলাকা দিয়ে সোর্স মস্তোফা ও লেংড়া জামালগং ও চারাগাঁও সীমান্তের লামাকাটা এলাকা দিয়ে সোর্স লেংড়া জামাল, জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে সোর্স আইনাল মিয়া, রিপন মিয়া, সাইফুল মিয়া, কলাগাঁও এলাকা দিয়ে সোর্স রফ মিয়া,দীপক মিয়া, চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট ও বাঁশতলা এলাকা দিয়ে সোর্স আনোয়ার হোসেন বাবলু, সোহেল মিয়া, বাবুল মিয়া ও লালঘাট এলাকা দিয়ে রুবেল মিয়াগং পৃথক ভাবে ১৫টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ৪শ মেঃটন কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ব্রিজের কাছে নিয়ে। এরআগে গত শুক্রবার (২১ জুন) রাত ২টায় একই ভাবে ওই গডফাদার ও তার সোর্স বাহিনী ১৮টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ৫শ মেঃটন কয়লা, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ভোরে ২০টি নৌকা বোঝাই করে পাচাঁরকৃত ৬শ মেঃটন কয়লা ও চুনাপাথরসহ চিনি, পেয়াজ পাচাঁর করে নিয়ে যায়। তবে গত বুধবার (১৯ জুন) ভোরে একই ভাবে ওই গডফাদার ও তার সোর্স বাহিনী ৩০টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে পাচাঁরকৃত প্রায় ১হাজার মেঃটন কয়লা ও মাদকদ্রব্য নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫টি নৌকা আটক করে। এরপরে গডফাদার তোতলা আজাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আটককৃত কয়লা বোঝাই ইঞ্জিনের নৌকাগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। তার আগে গত মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত ১টায় ২৫টি ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে প্রায় ৭শ মেঃটন কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে গডফাদার ও তার সোর্সরা। একই ভাবে গত ৫দিনে পাশের বালিয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, ইয়াবা কালাম মিয়া, হোসেন আলী, রতন মহলদার, কামারুল মিয়াগং প্রায় ৫হাজার মেঃটন ও টেকেরঘাট সীমান্তের চুনাপাথর খনি প্রকল্প, নিলাদ্রী লেক, বুরুঙ্গাছড়া, রজনী লাইন ও বড়ছড়া এলাকা দিয়ে সোর্স আক্কল আলী, রুবেল মিয়া, মহিবুর মিয়া, সাইদুল মিয়া প্রায় ৭ হাজার মেঃটন কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করাসহ পাশের চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, রাজাই, কড়ইগড়া ও বারেকটিলা এলাকা দিয়ে সোর্স জামাল মিয়া, নজরুল মিয়া, বুটকুন মিয়া, সাহিবুর মিয়াগং ১২হাজার মেঃটন কয়লা, চুনাপাথর, শতাধিক গরু, ঘোড়া ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করাসহ লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, সাহিদাবাদ, পুরান লাউড়, দশঘর এলাকা দিয়ে সোর্স বায়েজিদ মিয়া, জসিম মিয়া, রফিক মিয়া ও নুরু মিয়াগং বিপুল পরিমান কয়লা, পাথর, গরু, ঘোড়া, পেয়াজসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করেছে বলে জানাগেছে। কিন্তু পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল আটক করা কিংবা সোর্স ও তাদের গডফাদারকে গ্রেফতারের কোন খবর পাওয়া যায়নি। অথচ সুনামগঞ্জে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও তাহিরপুর থানায় ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার কর্মরত থাকাকালীন সময় সীমান্তে অভিযান চালিয়ে গডফাদার তোতলা আজাদের ছেলে কিশোর গ্যাংলিডার সিহাব সারোয়ার শিপুসহ তার অর্ধশতাধিক সোর্সকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানোসহ জব্দ করা হয়েছিল কয়েক কোটি টাকার অবৈধ কয়লা, চুনাপাথর, মোটর সাইকেল ও বালি বোঝাই ইঞ্জিনের নৌকা। এছাড়াও তোতলা আজাদের বাড়ি কামড়াবন্দসহ লাউড়গড়, শিমুলতলা, বিন্নাকুলি, বালিজুরী, তাহিরপুর সদর ও ফকির নগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, মদ, গাঁজা ও নাসির উদ্দিন বিড়িসহ জুয়ার বোর্ড থেকে তোতলা আজাদের শতাধিক লোকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু ওই দুই কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর সবকিছু উন্মুক্ত হয়ে যায়। গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সোর্স বাহিনীর দাপট বেড়ে যায় এবং ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে সোর্স দিয়ে ওপেন চাঁদাবাজি করে বর্তমানে গডফাদার তোতলা আজাদ প্রায় ১৫ কোটি, তার সোর্স আক্কল আলী ৫কোটি, রতন মহলদার ২কোটি, কামরুল মিয়া ১কোটি, ইয়াবা কালাম ৭কোটি, জিয়াউর রহমান জিয়া ৬কোটি, বাবুল মিয়া  ২কোটি, রফ মিয়া ৮ কোটি, আইনাল মিয়া ১১কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে চোরাচালান করতে গিয়ে এপর্যন্ত চারাগাঁও সীমান্তে ১২জন,বালিয়াঘাট সীমান্তে ৩৩জন,টেকেরঘাট সীমান্তে ১৫জন,চাঁনপুর সীমান্তে ৮জন ও লাউড়গড় সীমান্তে ৪৮জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাগেছে। তারপরও গডফাদার ও তার সোর্সরা রয়েগেছে অধরা।

এব্যাপারে তাহিরপুর কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের কারণে একদিকে কোটিকোটি টাকার সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে,অন্যদিকে বৈধ ব্যবসায়ীরা সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে। এব্যাপারে প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে বারবার অবগত করার পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়না। এউপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও আওয়ামীলীগ নেতা কফিল উদ্দিন বলেন-রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ওপেন গরু, কয়লা ও চুনাপাথরসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করা হচ্ছে। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশ এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়না। সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের বিষয়ে বিজিবি ক্যাম্প গুলোতে ফোন করে বারবার জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়না। তাই গডফাদার ও তার সোর্স বাহিনীকে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

তাহিরপুর থানার ওসি কাজী নাজিম উদ্দিন বলেন- সীমান্ত চোরাচালান বন্ধের দায়িত্ব বিজিবির, তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। এব্যাপারে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার শফিকুল ও চাঁনপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার আব্বাস বলেন- তাদের সীমান্ত দিয়ে কোন কিছু পাচাঁর হলে, জানালে তারা ব্যবস্থা নেবে। সুনামগঞ্জে টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার দিলীপ বলেন- আমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোন কিছু পাচাঁর হওয়ার খবর আমি পাইনা।