টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। দুর্ভোগে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিবছর পানি এসে তাদের অত্যাচার করে, কিন্তু দেখার কেউ নেই। অনেকে এসে শুধু ছবি তুলে নিয়ে যায়।
বুধবার (১৯ জুন) বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত উব্দাখালি নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার কমেছে। তারপরও বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে নদী পাড়ের সদর ইউনিয়নের সাউতপাড়া, মনতলা, ইসবপুর, কেশবপুর ও ইব্রাহিমপুরসহ পার্শ্ববর্তী বড়খাপন ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো গ্রাম এবং নাজিরপুর ইউনিয়নের দিলুরা, ফকির চান্দুয়াইন ও পাচকাটা গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষরা।
পানিবন্দিরা জানান, বাড়ির ভেতরে পানি থাকায় হচ্ছে না রান্না-খাওয়া। শুকনো খাবার দিয়ে কোনোমতে দিন কাটছে তাদের। উঁচু দু-একটি দোকান থেকে শুকনা খাবারের জোগান দিচ্ছেন বাড়ির অভিভাবকরা। তবে অনেকের নৌকা না থাকায় পানি পেরিয়ে বাড়ির বাইরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরেই ঢল এলে তারা কষ্ট ভোগ করেন। এ থেকে মুক্তি চান তারা।
পঞ্চাশোর্ধ রেহেনা আক্তার জানান, ঘর থেকে বেরই হতে পারছেন না তিনি। কোলের শিশুদের নিয়ে ভয় বেশি। বাইরে পুরুষরা একবার গিয়ে কিছু খাবার নিয়ে আসতে পারলে খাওয়া হয়, না হয় খালি পেটে থাকতে হয়।
রেহানা বলেন, ‘আমাদের খোঁজ রাখে না কেউ। হত্তি বছর (প্রতিবছর) এইবায় ফানি আইয়া আমরারে অত্যাচার করে, এইডার কুনু ব্যবস্থা করে না। এইবায় আইয়া ফডু তুইল্যা লইয়া যায় খালি।’
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, ৪২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষরা সেখানে অবস্থান নিতে পারবে।
এদিকে, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারি বৃষ্টিতে সিলেটের নদনদীর পানি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারিগাঙ্গ নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেকটা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় সিলেট মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরে ২০টি এলাকার ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছেন।
এছাড়া, অতি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই ও কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাকালুকি, হাইল হাওড়ে অস্বাভাবিক পানি বেড়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি খরস্রোতা ধলাই নদী বড়চেক-দেওড়াছড়া এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের নতুন ও পুরাতন ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে রহিমপুর ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। একই অবস্থা সুনামগঞ্জের প্রায় সবকটি নদ-নদীর। প্লাবিত হয়ে জেলার বেশির ভাগ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
একইসঙ্গে কক্সবাজারের টেকনাফে ভারি বর্ষণে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ৬ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা।