১৬ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৫:৫১:২৬ পূর্বাহ্ন


চট্টগ্রামে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য আটক
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৪
চট্টগ্রামে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য আটক চট্টগ্রামে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য আটক


নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম' এর ২ জন সক্রিয় সদস্যকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা ইউনিয়ন এলাকা থেকে উগ্রবাদী পুস্তিকা সহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭।

শুক্রবার (১৪ জুন) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা ইউনিয়ন এলাকার একটি পরিত্যক্ত একতলা ঘর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার  র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

র‌্যাব জানায়, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সাথে একত্রিত হয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’এর আমীর ও শীর্ষস্থানীয় নেতা-সহ প্রায় শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

এছাড়াও নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলাম ও হুজি সহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে র‌্যাবের নিয়মিত নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সকল জঙ্গি সংগঠনের তিন হাজারের অধিক এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় দুই হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র‌্যাব।

সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন নতুন সংগঠনের নামে সদস্য সংগ্রহ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা চালাচ্ছে। র‌্যাব জঙ্গি সংগঠনের এরূপ কার্যক্রমের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

সাম্প্রতিক সময়ে (২৩ মে ২০২৪) র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলিস্থান ও সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে “আনসার আল ইসলাম” এর ৩ জন শীর্ষ স্থানীয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা আফগানিস্থানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগাদান করে। কিন্তু র‌্যাব সহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলাম এর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়লে আনসার আল ইসলামের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহ সহ কার্যক্রম পরিচালনা এবং চলমান রাখার জন্য  গ্রেফতারকৃতরা আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহ সহ দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। যোগাযোগের জন্য তারা ব্যবহার করে End To End Encrypted  বিভিন্ন মেসেঞ্জার এবং মোবাইল অ্যাপ। 'বিপ' নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তাদের কাছে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যা প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পরবর্তীতে অব্যাহত গোয়েন্দা নজরদারি এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায় ‘শাহাদাত’ গ্রুপটি সালাহউদ্দিন নামক এক প্রবাসীর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তর, ঢাকা এর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭ এর একটি আভিযানিক দল  শুক্রবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা ইউনিয়ন এলাকার একটি পরিত্যক্ত একতলা ঘর থেকে জঙ্গিবাদী মিটিং পরিচালনাকালীন, “শাহাদাত” গ্রুপের দুইজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে।

এ সময় জব্দ করা হয় একাধিক জিহাদি বই এবং অন্যান্য আলামত।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ আসাদুজ্জামান আসিফ (২২), জেলা- পঞ্চগড় এবং মোহাম্মদ আহাদ (২১), জেলা- পাবনা।  এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে ০৫/০৬ জন পালিয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সংগঠনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য শুনে-দেখে উগ্রবাদে উদ্বদ্ধ হয়ে এবং উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা “আনসার আল ইসলাম” এর মতাদর্শে পরিচালিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতন সহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদেরকে বিভিন্ন অপব্যাখা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তোলা। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো এবং সংগঠনের সদস্যদের শারীরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতো। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরা সহ ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা তাদের গ্রুপকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সমমনা উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষনেতাদের সাথে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃতরা তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় এ্যাপস এর মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো এবং সংগঠনের সকল প্রকার নির্দেশনা এই এ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করতো বলে জানা যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, এ সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য, শিক্ষিত এবং উগ্র উঠতি বয়সীদের আকৃষ্ট করে দেশ বিরোধিতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। এ লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে তারা সংগঠনের সদস্যদের গোপনে শারীরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতো বলেও জানা যায়। তারা বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন উগ্রবাদী গ্রুপে তাদের বিচরণ ছিল বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, পূর্বে শাহাদাত জঙ্গি সংগঠনের তিনজন সক্রিয় সদস্য র‍্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর এ সংগঠনটির অন্যান্য সদস্যরা সতর্ক হয়ে যায়। সংগঠনের নিয়ন্ত্রণকারী সালাউদ্দিন সকলকে নিষ্ক্রিয়  হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়া সংক্রান্ত সতর্ক বার্তার একটি অডিও রেকর্ড র‍্যাব এর হাতে আসে। তদন্তের সুবিধার্থে উক্ত রেকর্ডটিও আলামত আকারে জব্দ করা হয়। এছাড়াও 'গোরাবা' নামক একটি অনলাইন গ্রুপে নিয়মিত অনলাইন মিটিং এর তথ্যও পাওয়া যায়।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।