১৬ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৭:৩০:২৭ পূর্বাহ্ন


স্ত্রীর পরকীয়া সহ্য করতে না পেরে, মেয়েকে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৪
স্ত্রীর পরকীয়া সহ্য করতে না পেরে, মেয়েকে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা স্ত্রীর পরকীয়া সহ্য করতে না পেরে, মেয়েকে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা


বরিশালের কাউনিয়া থানা এলাকার একটি চারতলা ভবন থেকে বাবা ও মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের স্বজনদের দাবি, মেয়ে রাবেয়া বশরী রোজাকে (৫) হত্যার পর নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন বাবা মোহাম্মদ নাঈম হাওলাদার (৩৫)।

বুধবার (১২ জুন) ভোরে কাউনিয়া প্রধান সড়কের স্বপ্নবিলাস ভবনের চতুর্থ তলার উত্তর পাশের ফ্লাটে এ ঘটনা ঘটে।

কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, নিহত মোহাম্মদ নাঈমের বাড়ি উজিরপুর উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিআইডি, গোয়েন্দা, পিবিআই, থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও নিহতদের স্বজনরা দাবি করেছেন, নাঈম তার মেয়ে রোজাকে গলাকেটে হত্যার পরে নিজেই নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছেন। নাঈমের এ কাজের পেছনে তার স্ত্রী অনা আক্তারকে দায়ী করছেন স্বজনরা। অনা পলাশপুরের নূরুল ইসলাম মোল্লার মেয়ে। নাঈম ও অনার প্রেমের সর্ম্পক ছিল। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে সাত বছর আগে পরিবারের অমতে তারা দুজন বিয়ে করেন। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখেন রাবেয়া বশরী রোজা।

নাঈমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নাঈম ঢাকায় গাড়ি চালাতেন। আর তার স্ত্রী অনা আক্তার পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তারা দুজন ঢাকাতে একসঙ্গেই থাকতেন। এরমধ্যে অনা আক্তার পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি বুঝতে পেরে নাঈম তার স্ত্রীকে ঢাকা থেকে বরিশালে নিয়ে আসেন। এরপর পলাশপুরের একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। অনা আক্তার পরকীয়ায় জড়িয়ে যাওয়া নিয়ে প্রায়ই তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। এ নিয়ে পারিবারিকভাবে বেশ কয়েকবার সালিশও হয়েছে।

এ ঘটনার জেরে অনা নারী নির্যাতন ও ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে নাঈমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নাঈমকে ডিভোর্স দিয়ে ঢাকায় চলে যায় অনা। এদিকে বরিশালে এসে অপসোনিন কোম্পানিতে গাড়ি চালকের চাকরি নিয়েছিল নাঈম। সেটিও চলে যায়। সব মিলিয়ে হতাশায় ডুবে যায় নাঈম। নাঈমের বোন আখি ১ মে স্বপ্ন বিলাস বাসাটি ভাড়া নেন। সেখানে নাঈম ও তার মেয়ে রোজাও থাকা শুরু করেন। এরমধ্যে অনা দেনমোহরের পাঁচলাখ টাকা দাবি করেন নাঈমের কাছে। পাশাপাশি মেয়ে রোজাকে তার কাছে পাঠানোর জন্য বলতেন।

নাঈমের বোন আখি বলেন, ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর নাঈম তার মেয়েকে নিজের সঙ্গে রাখে। পারিবারিক যত সালিশ হয়েছে সবখানে নাঈম সব শর্ত মেনে নিতো শুধু রোজাকে রাখতে পারবে বলে। কিন্তু অনা আক্তার মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, বুধবার সকালে নাশতা সেরে নাঈমের ঘরে ওদের খাবারের জন্য ডাকতে গিয়ে দেখি আমার ভাই ও রোজা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

নাঈমের স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে এবং তাদের পারিবারিক কলহের খবর সহকর্মী ও বন্ধুরা জানতেন। এ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পরিবারের বিষয়ে অনেক কিছু শেয়ার করতেন নাঈম। ঘটনার খবর পেয়ে কয়েকজন বন্ধু ও সহকর্মী ছুটে আসেন কাউনিয়া স্বপ্ন বিলাস ভবনে। তারা বলেন, একমাস আগে নাঈমের সঙ্গে কথা হয়েছে। তখন নাঈম বলেছে, স্ত্রীর কারণে সে অতিষ্ঠ। প্রথমত আয় রোজগার বন্ধ, বোনের বাসায় মেয়েসহ থাকতে হচ্ছে। তার ওপর স্ত্রী দেনমোহরের টাকা চাইছে।

নাঈমের কাছে তার স্ত্রী মেয়েকে ফেরত চেয়েছে। কিন্তু নাঈম দিতে রাজি হননি। নাঈম আমাদের বলেছিল, মেয়ে তার কাছে থাকতে চেয়েছে। কেউ নিতে আসলে হয় তাকে ফাইনাল (মেরে) করে দেব, নয়তো নিজে ফাইনাল হয়ে যাব। 

খবর পেয়ে বুধবার ভোর ৯টা থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ দুটি মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে দুপুর ২টা পর্যন্ত। সিআইডি ক্রাইম সিন সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করছে হত্যার মোটিভ। কিন্তু মেয়েকে হত্যার পর নিজের হাতে নিজের গলা কাটা কি সম্ভব, পাশাপাশি পাশের কক্ষে নাঈমের বাবা-মা আরেক রুমে বোন ও বোনের মেয়ে ছিল। দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটল অথচ পাশের রুমের কেউ জানতে পারল না এসব প্রশ্ন সামনে আসছে। মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। যে-সব প্রশ্ন সামনে আসছে সেগুলো নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। এটি শুধু কি আত্মহত্যা নাকি আরও কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পরিবার থেকে বলা হয়েছে মেয়ে রোজাকে তরকারি কাটার বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে নাঈম।

নাঈমের বাবা শাহজাহান হাওলাদার বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমি, নাঈম ও রোজা এক বিছানায় ঘুমাই। সকাল সোয়া ৭টার দিকে যখন আমি বাসা থেকে বেড় হয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলাম তখন দেখি নাঈম পান্তা ভাত খায়। তখন আমার ছেলের সঙ্গে কথাও হয়। নাঈম আমার কাছে ২০ টাকা চায়। রোজা তখন ঘুমাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেয়ে আমাকে কল করে জানায় নাঈম আর রোজা মার্ডার। এসে দেখি ওরা মেঝেতে রক্তাক্ত পড়ে আছে।

এর আগে ভোরে নাঈমকে ডিভোর্স দেওয়া স্ত্রী অনা নাঈমের মোবাইলে কল করে কথা বলে। রোজাকে ফেরত নিতে আসবে বলে হুমকি দেয়। তখন দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কিও হয় বলে জানান শাহজাহান।

স্ত্রীকে অসংখ্যবার জানিয়েছে, রোজাকে সে ফেরত দেবে না। তারপরও যখন রোজাকে নিতে আসার কথা বলছিল তখন হয়ত বাবা হিসেবে অসহায় বোধ করছিল নাঈম। তারপরই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহজাহান।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। নিহতের পরিবার, পারিপার্শ্বিক এবং আরও কোনো রহস্য আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।