১৬ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৭:৪০:১৮ পূর্বাহ্ন


‘ধানের চেয়ে মাছ চাষে তিনগুণ বেশি লাভ’
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৬-২০২৪
‘ধানের চেয়ে মাছ চাষে তিনগুণ বেশি লাভ’ ‘ধানের চেয়ে মাছ চাষে তিনগুণ বেশি লাভ’


মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলে এক কোটি মাছ পালনে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করলে তা ২ হাজার কোটি টাকা বিক্রি করা সম্ভব বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ধানের চেয়ে মাছ চাষে তিনগুণ বেশি লাভ।

রোববার (৯ জুন) ‘১০০ বছরে হাওর ও জলাভূমি’ শীর্ষক সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।  

মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সিলেটে বিল শুকিয়ে গেলে সেখানে ধান চাষ করা হয়। অথচ বিলে পানি ধরে রেখে মাছ চাষ করা হলে তা থেকে তিনগুণ বেশি লাভ করা যায়। এমন এক উদাহরণ মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল। এই বিলে এক কোটি মাছ পালনে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করলে তা ২ হাজার কোটি টাকা বিক্রি করা সম্ভব। 

তিনি বলেন, দেশের ৭১ শতাংশ জিডিপি আসতে পারে মিঠা পানির মাছ রফতানি করে। অনেক দেশ মিঠা পানির মাছের টেস্ট যে নোনা পানির মাছের টেস্টের থেকে অনেক বেশি সেটা জানে না। সেসব দেশে এই মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। 

আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে যে ডলার সংকট রয়েছে সেটিও এর মাধ্যমে কমে আসবে। পাশাপাশি আমাদের দেশে এতো সুন্দর সুন্দর হাওড়-বিল আছে যাকে পর্যটনবান্ধব করতে পারলে প্রচুর বিদেশি আমাদের দেশে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হতো। এতেও কিন্তু অনেকাংশে ডলার সংকট দূর করা যেত। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, আমরা টুনা ফিস ধরতে পারি না। অথচ জাপান আমাদের এখান থেকে এই মাছ ধরে জাহাজেই প্রসেসিং করে বাজারজাত করছে। 

সিলেটের রাতারগুল জলাবনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, রাতারগুলে ১০০ কোটির মতো গাছ রয়েছে। এসব গাছের গোড়ায় মাছ আশ্রয় পাচ্ছে। গাছে পাখি আশ্রয় নেয়। রাতারগুলের এই মডেল হাওর ও দেশের অন্যান্য জলাভূমির ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। তাতে পরিবেশেরও উন্নতি হবে।  

গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রসঙ্গ টেনে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বাড়লে যশোর, নোয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চল ডুবে যাবে। হাওর ও জলাভূমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

 তিনি বলেন, ৮০’র দশকে বাংলাদেশে বন ছিল ৭ শতাংশ, থাকতে হবে ২৫ শতাংশ। বর্তমানে ১৭ শতাংশ। দেশের ৮০ শতাংশ এলাকা বছরের ৮ মাস ধরে সবুজ থাকে। আমরা ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করছি। হাওরে ৭ মাস পানি থাকে। তখন মানুষের কাজ থাকে না। এই সময় তারা হাওর থেকে মাছ ধরে থাকে।  

 আখতারুজ্জামান বলেন, দেশের হাওর ও জলাভূমি সংরক্ষণে এই অধিদফতর আন্তরিকভাবে কাজ করছে। দেশের সকল জলাভূমি সংরক্ষণে এবং এগুলোর উন্নয়নে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি এই ব্যাপারে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও ‘আমরা নারী’ এর ফাউন্ডার এম এম জাহিদুর রহমান বিপ্লবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ‘হাওর সংরক্ষণ ও উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা’ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি এহসানুল হক জসীম।  

এহসানুল হক জসীম তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সাতটি জেলা এবং ভারতের কিছু এলাকা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও হাওর নেই। হাওরের খাদ্য উৎপাদন ১৭ শতাংশ, ২০ শতাংশ মাছ উৎপাদন হয়। দেশের গ্যাসের ৯০ শতাংশ হাওর অঞ্চল থেকে উৎপাদিত হয়ে আসছে। 

 তিনি বলেন, সরকারের অনেক প্রকল্পের কারণে হাওর নষ্ট হচ্ছে। হাওর অঞ্চলের মানুষজনের একটা বড় অংশ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত। ইদানিং মারাত্মক আকারে বন্যা দেখা দিচ্ছে। বজ্রপাতে মারা যায় অনেক মানুষ। কিন্তু এসবের খবর মিডিয়ায় কম আসে।  

জসীম বলেন, কিশোরগঞ্জের অল ওয়েদার রোডের কারণে হাওরের পানি যেতে পারে না। এতে ক্ষতি হচ্ছে। পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যা হওয়ার ক্ষেত্রে এটা অন্যতম কারণ। সেই  বন্যায় ১০০ জনের মতো মানুষ মারা গেছে দাবি করে তিনি বলেন, এই তথ্য গণমাধ্যমে আসেনি। হাওরের সংবাদগুলো যথাযথভাবে গণমাধ্যমে তুলে আনার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।