পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও তার মেয়েদেরকে আগামী ২৪ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (০৯ জুন) হাজিরার জন্য নতুন সময় চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে আবেদন করেন তারা। তাদের এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।
এর আগে সকাল ১০টায় দুদকে হাজির হওয়ার দিন ধার্য ছিল তাদের। কিন্তু তলবে আসেননি বেনজীরে স্ত্রী ও মেয়েরা। শুনানির সময় চেয়ে চিঠি দেন তারা। সকালে দুদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে বেনজীর আহমেদকে ১৫ দিন সময় বৃদ্ধি করে ২৩ জুন ফের তলবি চিঠি দেয়া হয় দুদক থেকে।
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুদক। এরইমধ্যে তার ৬২১ বিঘা জমি, ৪টি ফ্ল্যাট,৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ১৫ শেয়ার ও ৩টি বিও অ্যাকাউন্ট জব্দ করে সংস্থাটি। তার স্থাবর সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ আদালতের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করেছে দুদক। সম্পদের উৎস জানতে ৬ জুন বেনজীর ও স্ত্রী কন্যাদের আজকে (৯ জুন) তলব করেছিল সংস্থাটি।
গত ২৮ মে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেয় দুদক। সেই নোটিশে বেনজীরকে ৬ জুন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। কিন্তু গত ৫ জুন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে বেনজীরের পক্ষে তার আইনজীবী আরও ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীরকে আগামী ২৩ জুন পুনরায় হাজির হওয়ার জন্য নতুন তারিখ ঘোষণা করে সংস্থাটি।
গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
ধারণা করা হচ্ছে তিনি বা তারা দেশে নেই। যদিও দুদক থেকে তাদের বিদেশ যাত্রায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের জব্দ জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয়, সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজীরের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়াও তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়। আবার ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন।
এরই ধারবাহিকতায় বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় ৬২১ বিঘা জমি, ঢাকার গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব, ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ৩টি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের সন্ধান পায় দুদক। এরপর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেন আদালত।
আদালতের আদেশ আসার আগেই বেনজীর আহমেদ গত ৪ মে দেশ ছেড়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।