সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে চোরাচালান। চোরাকারবারীরা প্রতিদিন সরকারের কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি অবৈধ ভাবে ভারত থেকে অবাধে পাচাঁর করছে গরু, ঘোড়া, ছাগল, মহিষ, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, কয়লা, চুনাপাথর, চিনি, সুপারী ও পেয়াজসহ বিভিন্ন প্রকার পণ্য সামগ্রী। আর গত ২দিনে উপজেলার ৬ সীমান্তে পথে প্রায় ৫ কোটি টাকার মালামাল পাচাঁর করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- গত ৫ বছর আগে সুনামগঞ্জে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও তাহিরপুর থানায় ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার থাকাকালীন সময় সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরাচালানীদের গডফাদার তোতলা আজাদের অর্ধশতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোসহ জব্দ করা হয়েছিল তাদেও কোটি টাকার অবৈধ কয়লা, চুনাপাথর ও বালি বোঝাই ইঞ্জিনের নৌকা। এছাড়াও উপজেলার কামড়াবন্দ, লাউড়গড়, শিমুলতলা, বিন্নাকুলি, বালিজুরী ও তাহিরপুর সদরসহ একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, মদ, গাঁজা ও নাসির উদ্দিন বিড়িসহ জুয়ার বোর্ড থেকে তোতলা আজাদের শতাধিক লোকজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তারা দুই অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর সবকিছু যেন উন্মুক্ত হয়ে যায়। বেড়ে গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সোর্স বাহিনীর দাপট। তারা ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের পর সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে চাঁদাবাজি বর্তমানে কোটিকোটি টাকার মালিক। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি আইনগত কোন পদক্ষেপ। অন্যদিকে সীমান্তের বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পে হাজী মোজাম্মেল, চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পে খাদিমুল ইসলাম, বিল্লাল, আইয়ুব খান, মোনায়েম খান, বালিয়াঘাট সীমান্তে হাবিলদার শাজাহান, টেকেরঘাট সীমান্তে সাইদুর রহমান, চাঁনপুর সীমান্তে মোহাম্মদ আলী ও লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পে মোহাম্মদ হেসেনের মতো কমান্ডাররা কর্তরত থাকাকালীন সময় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য, বিড়ি, কয়লা, চুনাপাথর, কাঠ, গাছ, গরু, ঘোড়া ও বালি জব্দ করাসহ আটক করা হয়েছিল বারকি নৌকা, স্টিলবডি, ঠেলাগাড়ি, মোটর সাইকেল, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন। কিন্তু বর্তমানে তেমন কোন অভিযানের খবর পাওয়া যায়না।
এলাবাসী সূত্রে জানা যায়- বর্তমানে গডফাদার তোতলা আজাদের নেতৃত্বে লাউড়গড় সীমান্তে সোর্স পরিচয়ধারী জসিম মিয়া, বায়েজিদ মিয়া, নুরু মিয়া, রফিকগং, চাঁনপুর সীমান্তে সাহিবুর মিয়া, জম্মত আলী, রফিকুল, বুটকুন মিয়া, জামাল মিয়া, নজরুল মিয়া, নজির মিয়া, রুসম মিয়াগং, টেকেরঘাট সীমান্তে আক্কল আলী, রুবেল মিয়া, মহিবুর মিয়া, কামাল মিয়া, সাইদুল মিয়াগং, বালিয়াঘাট সীমান্তে রতন মহলদার, কামরুল মিয়া, হোসেন আলী, বাবুল মিয়া ও ইয়াবা কালামগং, চারাগাঁও সীমান্তে রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, রিপন মিয়া, সাইফুল মিয়া, বাবুল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, সোহেল মিয়া, দীপক মিয়াগং ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে লেংড়া জামাল, হযরত আলী, গোলাম মস্তোফাগং প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করছে। তাদের নেতৃত্বে চোরাচালান করতে গিয়ে এপর্যন্ত চারাগাঁও সীমান্তে ১২জন, বালিয়াঘাট সীমান্তে ৩৩জন, টেকেরঘাট সীমান্তে ১৫জন, চাঁনপুর সীমান্তে ৮জন ও লাউড়গড় সীমান্তে ৪৮জনের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও গডফাদার ও সোর্স রয়েগেছে অধরা।
এব্যাপারে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও আওয়ামীলীগ নেতা কফিল উদ্দিন বলেন- চাঁনপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গরু, কয়লা ও চুনাপাথরসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য ওপেন পাচাঁর করা হচ্ছে। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশ এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়না। বড়ছড়া কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের কারণে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আমরা হাজার হাজার বৈধ ব্যবসায়ীরা সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছি। এব্যাপারে বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে বারবার অবগত করার পরও তারা চোরাচালান বন্ধের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়না। সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া বলেন- বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করার খবর পাওয়ার সাথে সাথে বিজিবি ক্যাম্প গুলোতে ফোন করে জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়না। তাই সীমান্ত গডফাদার ও তার সোর্স বাহিনীকে গ্রেফতারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন। তাহিরপুর থানার ওসি কাজী নাজিম উদ্দিন বলেন- থানা পুলিশের কোন সোর্স নাই, সীমান্ত চোরাচালান বন্ধের দায়িত্ব বিজিবির। এব্যাপারে চাঁনপুর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার আব্বাস বলেন- কোন কিছু পাচাঁর হলে আমাকে জানাবেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জে টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার দিলীপ বলেন- সীমান্ত দিয়ে কোন কিছু পাওয়া খবর আমরা পাইনা, পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।