উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রবল স্রোতে গত দুই দিনে ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে আরও অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে চরম দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওই গ্রামের হাজারো বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জে গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে হাওর ও নদীর পানি। পাহাড়ি ঢলে প্রবল স্রোতে শুক্রবার ভোরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের বাঁধ ভেঙে বাহাদুরপুর গ্রামের রূপসা নদীর গার্ডওয়াল ধসে যায়। এতে ভাঙতে শুরু করে গ্রামের নদী তীরবর্তী বাড়িঘর। রাতেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ফলে এখন মাথা গোজার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে কাঁদছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
পূর্ণ লক্ষী বর্মণ। ৫ মেয়ে ও দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে ছিল সাজানো গোছানো সুখের সংসার। কিন্তু সেই সংসারে হঠাৎ কালো মেঘের থাবা। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে হাওরের বাঁধ ভেঙে পূর্ণর মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তাই ছোট মেয়েকে আকড়ে ধরে ভাঙা ঘরের মাটিতে বসে অঝরে কাঁদছেন তিনি।
পূর্ণ বলেন, নিমেষেই সাজানো ঘরটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ৫ মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো।
রূপসা নদীর পাড়ে জেগে ওঠা গ্রামটিতে হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। প্রতিবছর বর্ষাকাল এলেই ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর তীরবর্তী বাড়িঘর। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পানি বেশি বেড়েছে। এরইমধ্যে অর্ধশতাধিক বসতঘর, রান্নাঘর, শৌচাগার ও নলকূপ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন দেখা দেওয়ায় গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে ভাঙন আতঙ্কে পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। আবার অনেকেই তাদের আশ্রয়ের জায়গাটুকু বাঁচিয়ে রাখতে বাজার থেকে নতুন বাঁশ কিনে নতুন করে মজবুত করছেন।
তবে পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ঘর মেরামতে টিন, নগদ টাকাসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজ রহমান। তিনি বলেন, ভাঙন এলাকায় আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে।