ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে সরকারের কোটিকোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে পাচাঁর করা হচ্ছে গরু, ঘোড়া, কয়লা, চিনি, সুপারী ও পেয়াজসহ মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও নাসির উদ্দিন বিড়ি বিভিন্ন মালামাল। সীমান্ত চোরাকারবারীদের গডফাদার ও সোর্সদের নেতৃত্বে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে মৃত্যুসহ নানান অপ্রীতিকর ঘটনা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০শে মে) ভোররাত থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তে সোর্স পরিচয়ধারী রফ মিয়া,আইনাল মিয়া,রিপন মিয়া,সাইফুল মিয়া,লেংড়া জামাল,বাবুল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু,সোহেল মিয়াগং, অন্যদিকে বালিয়াঘাট সীমান্তে ইয়াবা কালাম,হোসেন আলী,জিয়াউর রহমান জিয়া,মনির মিয়া,রতন মহলদার ও কামরুল মিয়াগং, টেকেরঘাট সীমান্তে সোর্স আক্কল আলী,মহিবুর মিয়া, মিলন মিয়া,সাইদুল মিয়া,কামাল মিয়াগং, চাঁনপুর সীমান্তে সোর্স জামাল মিয়া, নজরুল মিয়াগং ও লাউড়গড় সীমান্তে সোর্স বায়েজিদ মিয়া, জসিম মিয়াগং ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা, চুনাপাথর, গরু,ঘোড়া, চিনি, পেয়াজ, বল্ডার পাথর, নাসির উদ্দিন বিড়ি,মদ, গাঁজা ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর শুরু করে। এই খবর পেয়ে সকাল ৬টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার রফিক অভিযান চালিয়ে গডফাদার তোতলা আজাদ, তার সোর্স ইয়াবা কালাম, রতন মহলদার ও জিয়াউর রহমান জিয়ার ২টি লড়ি বোঝাই ৩০মেঃটন চোরাই কয়লা জব্দ করেন। কিন্তু চাঁনপুর সীমান্ত থেকে সোর্স জামাল মিয়া ও নজরুল মিয়াগং মোটর সাইকেল দিয়ে ওপেন কয়লা পাচাঁর করাসহ টেকেরঘাট সীমান্তে সোর্স আক্কাল আলী, তার ছেলে রুবেল, শ্যালক মহিবুর মিয়া ও মিলন মিয়াগং চুনাপাথর ও কয়লা পাচাঁর করে বড়ছড়া শুল্কস্টেশনের কাঠের ব্রিজ সংলগ্ন শাহ পরানের খোলা জায়গায় ওপের মজুত করলে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। এছাড়াও চারাগাঁও সীমান্তে সোর্স রফ মিয়া,আইনাল মিয়া,বাবুল মিয়া ও আনোয়ার হোসেন বাবলুগং বিপুল পরিমান কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের আশেপাশে অবস্থিত একাধিক ডিপু ও বসতবাড়িতে মজুত করাসহ লাউড়গড় সীমান্ত দিয়ে সোর্স বায়েজিদ ও জসিম মিয়াগং পাথর,কয়লা,গরু ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করলেও কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। জানা গেছে—গত ৫ বছরে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে গডফাদার তোতলা আজাদ প্রায় ১৫কোটি, সোর্স আক্কল আলী ৩কোটি,সোর্স রতন মহলদার ২কোটি,কামরুল মিয়া ১কোটি,ইয়াবা কালাম মিয়া ২কোটি,জিয়াউর রহমান জিয়া ৩কোটি,সোর্স বাবুল মিয়া দেড় কোটি, সোর্স রফ মিয়া ৫কোটি ও আইনাল মিয়া ৭কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তারা এক সময় না খেয়ে থাকলেও বর্তমানে একাধিক বিলাস বহুল গাড়ি ও বাড়ি ক্রয় করাসহ সুনামগঞ্জ ও সিলেটে ক্রয় করেছে ফ্লাট বাসা।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ মেম্মার কফিল উদ্দিন বলেন— চাঁনপুর সীমান্ত দিয়ে ওপেন চোরাচালান হচ্ছে কিন্তু বিজিবি কোন পদক্ষেপ নেয়না। সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম ভঁূইয়া বলেন— রাষ্ঠ্রীয় স্বার্থে চোরালানের বিষয়ে চাঁনপুর ক্যাম্পের মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার কল করার পর কেউ ফোন রিসিভ না করে আমার মোবাইল নাম্বার ব্লক করে দেয় তারা। এছাড়া টেকেরঘাট ও চারাগাঁও সীমান্ত চোরাচালানের বিষয়ে বিজিবি ক্যাম্পে বারবার জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়না।
এব্যাপারে উপজেলার চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার শফিকুল মোবাইলে বলেন সীমান্ত এলাকা অনেক বড় সেই অনুযায়ী আমাদের লোক কম। বালিয়াঘাট ক্যাম্প কমান্ডার রফিক বলেন, আমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর হচ্ছে জানতে পেরে অভিযান চালিয়ে ২লড়ি বোঝাই অবৈধ কয়লা জব্দ করে টেকেরঘাট কোম্পানীতে হস্তান্তর করেছি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।