ডাইনিংয়ের খাবারে সিগারেট পাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আবাসিক হলে অতিথি কক্ষ, প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের কক্ষের নামফলক ভাঙচুরসহ হলগেটে তালা দিয়ে আন্দোলন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক উল্লেখ করে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি হল প্রাধ্যক্ষের।
সোমবার (২৭ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, দুপুরে খাওয়ার সময় খাবারে সিগারেটের টুকরো পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষার্থী মুনির। তিনি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী বলে জানা গেছে। পরে এ ঘটনার জেরে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতিথি কক্ষ, প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের কক্ষের নামফলক ভাঙচুরসহ হলগেটে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।
আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির পক্ষে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তৌহিদুল ইসলাম, হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাসুদুর রহমান ও তাদের অনুসারীরাও অংশ নেন।
একপর্যায়ে হল প্রাধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মুখে হলে ঢুকতে না পেরে তিনি ফিরে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ ও সহকারী প্রক্টর ড. জাকির হোসেন ও আল মামুন ঘটনাস্থলে যান এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শোনেন। কিন্তু বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে ছাত্র উপদেষ্টাও ফিরে যান। এরপর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব হলে আসেন। পরে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক এসে শিক্ষার্থীদের প্রায় ১৮টি অভিযোগ শোনেন এবং দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে যান।
এ ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাকে হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগসহ শিক্ষার্থীরা গেটে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছিল। তখন ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ, ইমরান, মাসুদসহ তাদের অনুসারীরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে হল থেকে চলে এসেছি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিহিত করেছি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, সিগারেট ভাসমান বস্তু। রান্নার সময় এটা পানিতে ভেসে থাকার কথা। পাথর বা ইটের টুকরো হলে আলাদা হিসেব ছিল। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক দাবি। এটাকে পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। তারপরও আমি ডাইনিং কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রান্না করার নির্দেশ দিয়েছি।
অভিযোগটি পরিকল্পিত মনে হওয়ার প্রসঙ্গে প্রাধ্যক্ষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার জন্য বিভিন্ন হল থেকে খেলোয়াড় সিলেক্ট করা হয়েছে। যারা সিলেক্ট হয় তারা ট্রাউজার, জার্সি, ট্র্যাকস্যুট পেয়ে থাকে। এর জন্য আমাকে হল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তালিকা দেওয়া হয়েছিল। আমার হলের সাতজনের মধ্যে তারা কেউ সিলেক্ট হয়নি। পরে ছাত্রলীগের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আমার কাছে দুই গ্রুপের জন্য ১০টা করে জার্সি চায়। এটা আমার পক্ষে সেটা দেওয়া সম্ভব না বলে জানিয়ে দেই। এসময় সে অনেক অবান্তর কথাবার্তা বলে, আমি সেগুলো পাত্তা না দিয়ে চলে আসি। পরে আজ দুপুরে জানতে পারি হলে খাবারের মধ্যে সিগারেট পাওয়া গেছে। এই আন্দোলনে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী ছিল না।
এ ব্যাপারে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জার্সির জন্য প্রাধ্যক্ষকে কোনো তালিকা দেওয়া হয়নি। আজকের ঘটনায় আমি সম্পৃক্ত নই। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া ভিন্নখাতে নিতে এমন অভিযোগ তুলছেন তিনি। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আরেক নেতা মাসুদুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
হলের সমস্যার বিষয়ে আবাসিক শিক্ষার্থী আবিদুল্লাহ বলেন, আমাদের হলের ক্যান্টিন চালু নেই। তাছাড়া ডাইনিংয়েও মানসম্মত খাবার পরিবেশন হয় না। আমরা এটার কার্যকর সমাধান চাই।
নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মো. মারুফ হাসান বলেন, অনেক আগে থেকেই হলের মধ্যে বিভিন্ন অনিয়ম চলে আসতেছে। আমরা হল প্রাধ্যক্ষের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই আজ আন্দোলনে নেমেছি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, আমি সেখানে শেষ মুহূর্তে গেছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীরা খাওয়ার সময় ডালের মধ্যে সিগারেটের কিছু অংশ পাওয়ায়, সেটা নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। পরে প্রাধ্যক্ষ এসে কোনো সমাধান না দিয়েই চলে যায়। পরে আমরা গিয়ে প্রক্টর স্যারকে ডাকি। পরে প্রক্টর স্যার শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে যায়।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, এখানে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এটা হলের সকলের আন্দোলন ছিল৷ আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ছিলেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় কোনো অভিযোগ নেই। কার খাবারে সিগারেটের অংশ পাওয়া গেছে সেটাও কেউ জানায় নি। হলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ খাবারের মান বৃদ্ধির বিষয়গুলো জানিয়েছে। সেগুলো সমাধানে প্রাধ্যক্ষকের সঙ্গে আমরা কথা বলব।