সুরা মুলক কোরআনের ৬৭তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ সুরাটির আয়াত ৩০টি, রুকু ২টি। বেশ কিছু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাতে এ সুরা পাঠ করলে কবরে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সুরাটি তার পাঠকারীর জন্য আল্লাহর সাথে কাছে সুপারিশ করবে। সাহাবিরা এ সুরাটিকে ‘মানেআ’ বা কবরের আজাব প্রতিরোধকারী বলতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন,
سُورَةٌ مِنَ الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً، تَشْفَعُ لِصَاحِبِهَا حَتَّى يُغْفَرَ لَهُ: تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ.
কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে। যে ব্যক্তি নিয়মিত ওই সুরা পাঠ করবে তার জন্য সুরাটি ক্ষমা আদায় করা পর্যন্ত সুপারিশ করতে থাকবে। সে সুরা হল, ‘তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মুলক’। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪০০, সুনানে তিরমিজি: ২৮৯১)
সুরা মুলকের আলোচ্যবিষয় আল্লাহর বড়ত্ব, তার ক্ষমতার বিভিন্ন নিদর্শন, আখেরাতের জীবন, মুমিনদের পুরস্কার, কাফেরদের শাস্তি ইত্যাদি।
সুরা মুলকের ১৬-১৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
(১৬)
أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ
আআমিনতুম মান ফিসসামাই আইঁ ইয়াখসিফা বিকুমুল আরদা ফাইযা হিয়া তামূর।
তোমরা কি এটা থেকে নির্ভয় হয়েছ যে, যিনি আকাশে রয়েছেন তিনি তোমাদেরকেসহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দেবেন, অনন্তর তা আকস্মিকভাবে থর থর করে কাঁপিতে থাকবে?
(১৭)
أَمْ أَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِباً فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ
আম আমিনতুম মান ফিসসামাই আইঁ ইউরসিলা আলাইকুম হাসিবান ফাসাতা’লামূনা কাইফা নাযীর।
নাকি তোমরা হতে নির্ভয় হয়েছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের ওপর কঙ্করবর্ষী ঝঞ্ঝা প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে কেমন হয় আমার সতর্কবাণী!
(১৮)
وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ
ওয়া লাকাদ কাযযাবাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ফাকাইফা কা- না নাকীর।
তাদের আগের লোকেরাও আমার সতর্কবাণী প্রত্যাখ্যান করেছিল, পরিণতিতে কেমন ছিল আমার শাস্তি!
(১৯)
أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافَّاتٍ وَيَقْبِضْنَ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمَنُ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ بَصِيرٌ
আওয়ালাম ইয়ারাও ইলাত্তাইরি ফাওকাহুম সাফফা-তিওঁ ওয়াইয়াকবিদন । মাইউমছিকুহুন্না ইল্লাররাহমা-নু ইন্নাহূবিকুল্লি শাইয়িম বাসীর।
তারা কি তাকিয়ে দেখেনি তাদের মাথার ওপর উড়ন্ত পাখিগুলোর দিকে, যারা ডানা বিস্তার করে ও গুটিয়ে নেয়? পরম করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ এদেরকে স্থির রাখে না। নিশ্চয় তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. যারা অনবরত আল্লাহর নাফরমানি করে, তাদের ভয় করা উচিত যে তাদের ওপর যে কোনো সময় আল্লাহর শাস্তি নেমে আসতে পারে। ভুমিধ্বস, ভূমিকম্প বা পাথরের বর্ষণে তারা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
২. যুগে যুগে জালেম ও কাফেররা আল্লাহর শাস্তির শিকার হয়ে ধ্বংস হয়েছে। ক্ষণকাণের জন্য ঔদ্ধত্য প্রদর্শনের সুযোগ পেলেও অচিরেই তাদের দম্ভ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। মানুষের উচিত পূর্ববর্তীদের পরিণতি দেখে শিক্ষা গ্রহণ করা।
৩. আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিক্ষমতার নানা নিদর্শন আমাদের ঘিরে আছে। পক্ষিকুলের আকাশে ওড়া ও ভেসে থাকাও আল্লাহর সৃষ্টিক্ষমতার একটি নিদর্শন।