রাজশাহীর তানোরসহ পাশ্ববর্তী গোদাগাড়ী, মোহনপুর ও মান্দার গ্রাম-গঞ্জে হাতের নাগালে মিলছে ভয়ঙ্কর মাদক ট্যাপেন্টাডল (ট্যাবলেট) বড়ি।ইয়াবার বিকল্প হিসাবে ভয়ংকর ট্যাবলেটে ঝুঁকছে ইয়াবাসেবীরা। এটি হলো 'ট্যাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইড'। ইয়াবার চেয়ে কম দামে গ্রাম-গঞ্জে সহজেই হাতের নাগালে পাওয়ায় এখন ইয়াবা আসক্তদের পছন্দের মাদকে পরিণত হয়েছে এই ট্যাবলেট।
সুত্র জানায়, তানোরের ঠাকুরপুকুর, সিধাইড়, দরগাডাঙা, প্রকাশনগর, ইলামদহী, মাদারীপুর ও চাঁন্দুড়িয়া। তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুরের শ্যামপুর, কালীতলা ও খয়রা, মান্দার ভারশোঁ, তেতুলিয়া ও সাবাইহাট, গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, রিশিকুল ও পাকড়ি এলাকার গ্রাম-গঞ্জে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট সহজেই মিলছে। ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ইয়াবার চেয়ে বহুগুণ ক্ষতিকর। এটি সেবনে মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ট্যাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইড মূলত ব্যথানাশক ওষুধ। এটি আগে বাংলাদেশে কয়েকটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করত। ২০২০ সালে এটি 'খ' শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসাবে ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে দেশে এ ট্যাবলেটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এই ট্যাবলেট উৎপাদন করছে।
সুত্রে জানা গেছে, দেশজুড়ে যখন ইয়াবার বিরুদ্ধে মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, তখন ইয়াবাসেবীদের কাছে এর বিকল্প হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ট্যাপেন্টাডল। চোরাকারবারিরা এসব ট্যাবলেট এনে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ গোপণে গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন ফার্মেসিতে এসব ট্যাবলেট বিক্রি করছে।একশ্রেণীর ফার্মেসি মালিক অধিক মুনাফার লোভে এসব ট্যাবলেট তুলে দিচ্ছেন ইয়াবাসেবীদের হাতে।
সুত্রে জানা যায়, প্রতি পিস ট্যাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইড ১০০ এমজি প্রতিবেশী দেশে খুচরা মূল্য ১১ টাকা ৫০ পয়সা। চোরাই পথে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করা হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পিস। আর মাদক বিক্রেতা কিংবা ফার্মেসি মালিকরা ইয়াবা সেবীদের কাছে প্রতি পিস ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করে। লাল- হলুদসহ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে এই ট্যাবলেট। দেখতে হুবহু ইয়াবার মতোই। অনেক সময় মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ট্যাবলেটের সঙ্গে মিশিয়ে এটি বিক্রি করে থাকেন অধিক দামে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাদক ব্যবসায়ী বলেন, এ ট্যাবলেট ইয়াবা ও হেরোইনের মতোই সেবন করে মাদকসেবীরা। কয়েক বছর ধরে এই ট্যাবলেট ইয়াবার বিকল্প হিসাবে বিক্রির চেষ্টা চলছিল। তবে কয়েক মাস ধরে ইয়াবাসেবীদের কাছে এ ট্যাবলেটের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। ইয়াবা ছেড়ে তারা এটিতে ঝুঁকছে। এটি বিক্রিতে ঝুঁকিও কম। অধিকাংশক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সব সদস্য এই ট্যাবলেট চিনেনও না। যে কারণে এটি বহন করতেও অনেক সুবিধা। ওষুধ হিসাবেই বহন করা যায়। তিনি জানান, এই ট্যাবলেট ট্যাপেন্টা, পেন্টাডল, সিটাডলসহ বিভিন্ন নামে বিক্রি হয়ে থাকে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,
ইয়াবা মূলত ক্রেজি ড্রাগ হিসাবে পরিচিত। ইয়াবা সেবনে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, পরবর্তী সময়ে এতে ক্ষতি হয়। কিন্তু ট্যাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইডের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ইয়াবার বিপরীত। এটি সেবন করলে ঝিমুনি আসে। এই বিপরীতধর্মী ওষুধকে কেন ইয়াবার বিকল্প হিসাবে মাদকসেবীরা ব্যবহার করছে, তা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে আমাদের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।