গত ২২ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের দোকানগুলোর খাবারের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে প্রতিটি খাবারের যথাযথ মান নিশ্চিতে নিয়মিত তদারকি এবং দাম অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করাসহ নির্দেশনা অনুযায়ী খাবার পরিবেশন না করলে বড় ধরনের জরিমানা করারও ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। দাম নির্ধারণ করে দিয়েই ক্ষান্ত প্রশাসন। প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে খাবারের দাম ফের বাড়ালেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্টদের। ফলে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে খাবারের নতুন মূল্যতালিকা সম্বলিত নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হলেও তা সরিয়ে ফেলেছে হোটেল-দোকান মালিকরা। তারা নিজেদের মতো মূল্য নিচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। কোনো অবস্থাতেই প্রশাসনকে তোয়াক্কা করছে না তারা। তবুও নীরব প্রশাসন। দাম বেশি নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসের সিলসিলা রেস্তোরাঁ, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহণ মার্কেট ও সিরাজী ভবনের সামনেসহ অন্যান্য দোকানগুলোতে নির্ধারিত মূল্যে খাবার বিক্রি হচ্ছে না। মূল্যতালিকা অনুযায়ী কিছু কিছু আইটেম বিক্রি করলেও তা পরিমাণে যেমন কম, তেমন স্বাদহীন। সরেজমিনে দেখা যায়, দেড় প্লেট ভাত ১৮ টাকা নির্ধারিত হলেও দোকানিরা নিচ্ছেন ২০ টাকা, রান্না ও ভাজা ডিম ১৫ টাকা হলেও দোকানিরা রান্না ডিম নিচ্ছেন ২০ টাকা ও ভাজা ১৭-২০ টাকা, লাল চা ৬ টাকার জায়গায় ৭ টাকা, সোনালী মুরগি ৭০ টাকার জায়গায় ৮০ টাকা, মুরগি ৩০ টাকার জায়গায় ৩৫ টাকা, চপ-পুরি-সিঙ্গাড়া ৬ টাকার জায়গায় ৭ টাকা, পরোটা ৬ টাকার জায়গায় ৭ টাকা, রুটি ৮ টাকা, দুধ চা ১০ টাকার জায়গায় দোকানিরা নিচ্ছেন ১২ টাকা।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসনের শিক্ষার্থী জওহর দোদায়েভ বলেন, প্রশাসন যখন ক্যাম্পাসে খাবারের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন শিক্ষার্থীদের একটা দাবি ছিল খাবারের মান যেন কমে না যায়। অথচ কিছুদিন যেতে না যেতেই শিক্ষার্থীদের আশঙ্কারই বাস্তবায়ন ঘটল। প্রথমে খুব বাজেভাবে খাবারের মান কমে গেল। এরপর প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি জানিয়ে মূল্য বৃদ্ধি ঘটে আগের অবস্থায় ফিরে গেল। খাবারের মানও আগের থেকে কমে গেল। এ ব্যাপারে প্রশাসন সেই শুরু থেকেই গা ছাড়া ভাব নিয়ে চলেছে। কোনো কার্যকরী মনিটরিং টিম নেই, কারো কোনো জবাবদিহিতা নেই। শিক্ষার্থীদের অবিভাবক হয়েও এই সন্তানতুল্যদের ব্যাপারে ন্যূনতম শুভাকাঙ্ক্ষীসূলভ আচরণও তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না।
তিনি আরো বলেন, কিছু সময়ের জন্য প্রশাসনের কথা না হয় বাদই দিলাম। ক্যাম্পাসের একমাত্র সক্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন, 'ক্যাম্পাসের পাহারাদার' নামে খ্যাত ছাত্রলীগও তো পারে ক্যাম্পাসটাকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে গড়ে তুলতে। অথচ তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগের কোনো কমতি নেই। তাছাড়া ক্যাম্পাসের সামাজিক ও অধিকারভিত্তিক সংগঠনগুলোর এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সচেষ্ট হওয়া উচিত।
আরেক শিক্ষার্থী রাইসা রহমান বলেন, দোকানিরা নিজের মতো দাম বাড়াচ্ছেন। খাবরের মানও নিম্নমানের। দামের সবচেয়ে ঊর্ধ্বে হচ্ছে টুকিটাকি চত্বরের দোকানিরা। ওই দোকানগুলোতে খাবারের মানও সবচেয়ে নিম্নমানের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরিকল্পনা কি এক মাসের জন্য? সামান্য কয়েকটা দোকান প্রশাসন মেইনটেইন করতে পারে না। এখন কি সব স্টুডেন্ট প্রতিদিন দোকানদারের সাথে ঝগড়া করবে? প্রক্টর প্রতিদিন ক্যাম্পাসে রাতে লাইট মারার সময় পায়, ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে দিনের বেলা সপ্তাহে একদিন হলেও লাইট মারলেও তো হয়।
প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে না মেনে বেশি দাম নেওয়ার বিষয়ে ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরের এক দোকানি বলেন, সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরাও তো নিরুপায়। এজন্য আমরা চাইলেও দাম কমাতে পারি না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, কয়েকদিন থেকে দোকানিরা অতিরিক্ত মূল্য রাখছে এমন অভিযোগ পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নিয়ম-কানুন মানছে না তারা। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা অতি দ্রুত অভিযান পরিচালনা করব। প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জরিমানা এমনকি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে।