২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৪:১৬:৪১ পূর্বাহ্ন


ইদের আগেই বেপরোয়া কিশোর গ্যাং ও বাইকার পার্টি! আতঙ্কে পথচারীরা
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২৪
ইদের আগেই বেপরোয়া কিশোর গ্যাং ও বাইকার পার্টি! আতঙ্কে পথচারীরা ইদের আগেই বেপরোয়া কিশোর গ্যাং ও বাইকার পার্টি! আতঙ্কে পথচারীরা


পবিত্র রমজানের শেষে ইদ উৎসবের আর বাকি মাত্র ৩ থেকে ৪ দিন। ইদের চাঁদ উঠার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে থাকে উৎসব আয়োজন। আর এ উৎসব আয়োজনে কিশোর বাইকার ও কিশোর গ্যাঙের প্রাণঘাতি দৌরাত্ম্য থাকে চোখে পড়ার মতো। তবে এবার ইদ উৎসবের আগেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর বাইকার ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। সন্ধ্যার পরপরই শুরু হচ্ছে কিশোর গ্যাং ও বাইকার পার্টির দৌরাত্ম্য। রাস্তায় বাইকার পার্টির বেপরোয়া রেসিঙে ভয় ও শঙ্কা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করছে পথচারী ও সাধারণ মানুষ। ঘটছে দুর্ঘটনায়ও।

পথচারী ও স্থানীয়দের ভাষ্য ও পর্যবেক্ষণে উঠে আসা তথ্য বলছে, ইদের চার-পাঁচ দিন আগে থেকেই রাজশাহী মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর বাইকারদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের সংঘবদ্ধ বাইক রেস। সন্ধ্যার পর মহনগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে রেলগেট হয়ে ভদ্রা, তালাইমারি, নতুন ফ্লাইওভার রোড, কাশিয়াডাঙ্গা থেকে আমচত্বর, আলুপট্টি থেকে তালাইমারি, বিমান চত্বর থেকে মেহেরচন্ডি, রেলগেট থেকে নওহাটা, পদ্মাপাড় ঘেঁষে চলা রাস্তাসহ আধুনিক আলোকসজ্জিত সড়কগুলোতে কিশোর বাইকারদের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সড়ক নিরাপদ রাখতে সরকারের আইন আছে। কিন্তু শুধু আইন দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কেউ কেউ আইন ভাঙতে পারলে খুশি হয়। বাইক চালানোর যে নিয়ম-কানুন আছে, তা না জেনেই কিশোররা বাইক চালাচ্ছে। দু’একজন জানলেও অধিকাংশ উঠতি বয়সি কিশোররা আইন মানতে চায় না। বর্তমানে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কিশোর গ্যাং কালচারের চর্চা করছে। যাদের পেছনে কিছু রাজনৈতিক নেতার ইন্ধনও আছে। যে কারণে এরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না। এ কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। ইদ উৎসবকে সামনে রেখে এরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

ইফতার শেষে নগরীর কাজলা অক্ট্রয়মোড় এলাকা দিয়ে সন্ধ্যার পর হেঁটে যাচ্ছিলেন আবু হেনা মোস্তফা জামান। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর এ রাস্তা দিয়ে খুব সতর্কভাবে চলাচল করতে হয়। কখন যে কোন কিশোর বাইকার এসে ধাক্কা দেয়, সে ভয়ে থাকতে হয়। পুলিশের তদরকি এখানে খুব একটা দেখা যায় না। কিছুদিন আগে দুইজন রামেক ইন্টার্ন ডা. (ছেলে মেয়ে), ফ্লাইওভারের রাস্তায় রিক্সা নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন। হটাৎ পেছন থেকে এক কিশোর বাইকার এসে ধাক্কা দিলে রিক্সায় থাকা নারী-পুরুষ ইন্টার্ন ডা. রাস্তায় ছিটকে পড়ে আহত হন। সেই সাথে রিক্সা চালকও আহত হন। এ সময় সাধারণ জনতা বাইকার ও বাইকে থাকা দুই কিশোরকে ধরে পুিলশে সোপর্দ করেন।

আরেক কলেজ শিক্ষার্থী ফাইসাল কনক বলেন, ইফতারের আগে গত শুক্রবারের আগের শুক্রবার নগর ভবনের পেছনে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলাম। হঠাৎ চার রাস্তায় জ্যাম তৈরি হয়। চেয়ে দেখি, বেশ কয়েকজন কিশোর মিলে এক গাড়ি চালককে পিটাচ্ছে। যানজট দীর্ঘ হওয়ায় এক ট্রাফিক পুলিশ গিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাও পিটিয়েই যাচ্ছিলো। পরে পুলিশের গাড়ি ডাকার হুমকিতে কিশোররা পালিয়ে যায়। নগর সড়কে দাঁড়ালে এমন চিত্র প্রায়শই দেখা যাচ্ছে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যা বলছেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. তৌফিক হাসান টিটো বলেন, রাজশাহীতে ইদকে কেন্দ্র করে শান্তির নগরীতে কিশোর বাইকারদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিশোর গ্যাং কালচার। এতে পরিস্থিতি দিনকে দিন অবনতি হচ্ছে। আবার উঠতি বয়সী বাইকাররা আনন্দ উৎযাপনের জন্য বাইক চালায় ওভার স্পিডে। ফলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটে। ইদের উৎসব যেন অসচেতনতার অভাবে মলিন না হয়ে যায় সেদিকে অভিভাবকদের যেমন লক্ষ্য রাখতে হবে তেমনি প্রশাসনকেও সজাগ থাকতে হবে।

হাসপাতালেও থাকে প্রস্তুতি: প্রতিবছর ইদ উৎসবের ছুটিতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ইউনিটে চাপ বেড়ে যায়। উৎসব কেন্দ্রীক বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এবারও নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, একটু সর্তক ও সচেতন হলেই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। সুতরাং একটি সুন্দর ইদ উদযাপনের জন্য সকলকে বেপরোয়া যে কোন কাজ থেকে দুরে থাকতে হবে।

রামেক হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মদ বলেন, জরুরি বিভাগে আমাদের সবধরণের প্রস্তুতি আছে। ছুটিতেও ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক থাকবেন। অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য জরুরি সেবাও চালু থাকবে।

পুলিশ বলছে: থানায় লিখিত অভিযোগে পেলে পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করছেন। তবে অধিকাংশ ঘটনায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে সূত্র বলছে, বিড়ম্বনার ভয়ে অধিকাংশ ঘটনা থানা পর্যন্ত যাচ্ছে না। এতে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

গত এক মাসের পুলিশের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত পৌনে ৯ টায় বোয়ালিয়া মডেল থানার গৌরহাঙ্গা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে শাহমখদুম থানা পুলিশ।

গ্রেফতার হওয়া কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হলো রহিদুল ইসলাম (২০), রবিন (১৯), নাসির (১৯), রকি আহমেদ শিমুল (১৯) ও ফারহান আরাফাত (১৯)। তারা সবাই নগরীর বাসিন্দা।

শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ ইসমাইল হোসেন জানান, পবা নতুনপাড়া আরডিএ মাঠের সামনে গত ২৭ অক্টোবর আরাফাত ও তার বন্ধু সাব্বিরকে অপহরণ করে মারপিট করার ঘটনার কিশোর গ্যাংয়ের এ সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

আসামী রকি আহমেদ শিমুল ও ফারহান আরাফাত গত ১ মার্চ শাহমখদুম থানার মোড় এলাকার নূর জামানের মুরগির দোকানে মুরগি কিনে টাকা না দিয়ে মারধর ও হুমকি দেয়ার আসামি। ওই ঘটনায় পৃথক অভিযানে আরও ৬ কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এসব বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র মোঃ জামিরুল ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে পুলিশ আগে থেকেই কাজ করছে। ইদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই কিশোর বাইকাররা যেন রেসিং করতে না পারে সে লক্ষ্যে বিশেষ প্রস্তুতি থাকে। এবারও সেটা থাকবে।