২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০২:৩৬:১৩ অপরাহ্ন


তানোর উপজেলা নির্বাচনে ময়না-মামুনের দ্বিমুখী লড়াই
আলিফ হোসেন, তানোর প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৩-২০২৪
তানোর উপজেলা নির্বাচনে ময়না-মামুনের দ্বিমুখী লড়াই তানোর উপজেলা নির্বাচনে ময়না-মামুনের দ্বিমুখী লড়াই


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই দরজায় কড়া নাড়ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীসমর্থকেরা গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। আড্ডা ও চায়ের কাপে উঠেছে আলোচনার ঝড়।  এই নির্বাচন ঘিরে তানোর উপজেলায় শুরু হয়ে গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা। বর্তমান চেয়ারম্যান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে করছেন সভা। আবার নতুন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে জানান দিচ্ছেন তাদের নির্বাচন করার কথা। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তুলে ধরছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।

এখানো নির্বাচন থেকে দূরে সরে আছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে।বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোটে আসবে কি না তা নিয়ে এখনি মুখ খুলছেন না। তবে তারা কখানোই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দিবেন না। যেটা দেখা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সেই হিসেবে তাদের মামুনের পক্ষে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। এটা হলে আওয়ামী লীগের একাংশের সঙ্গে বিএনপি-জামাতের ভোট যোগ হলে মামুনের বিজয় প্রায় নিশ্চিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মী-সমর্থকেরা ছাড়া অন্য কোন দলের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার মনোভাব দেখা যায়নি। ইতোমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না, ভাইস-চেয়ারম্যান সোনীয়া সরদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মাসুদ রানা চৌধুরী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্দিতা করবেন বলে আলোচনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলীয় সমর্থনে নির্বাচন করবেন। আবার একই দলের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র হয়ে ভোটের মাঠে লাড়াই করবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলীয় প্রতীক উঠিয়ে  দেয়ায় নির্বাচনী আমেজ হয়েছে ভিন্ন। ময়না জনপ্রিয় নেতা সেটা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নাই সবাই শিকার করেন।তবে তার জনপ্রিয়তার বারোটা বাজিযেছে তার অনুগত কতিপয় গভীর নলকুপ অপারেটর-কথিত সভাপতি ও অনুপ্রবেশকারি শিক্ষক নেতা। যারা পারিবারিকভাবে জামায়াতের রাজনীতির সঙে সম্পৃক্ত। অথচ হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা।এদের কারণে ভোটের মাঠে ময়নার জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। তিনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মাঠে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক ও কামাগাঁ ইউপির দুই বারের সাবেক সফল চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান ও আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি সোনীয়া সরদার। এছাড়াও সাবেক ছাত্র নেতা মাসুদ রানা চৌধুরীপ্রমুখ। ফলে উপজেলা  নির্বাচনে চেয়ারম্যান ময়নাকে এবার  ভোট যুদ্ধে  কঠিন চ্যালেঞ্জের মূখে পড়তে হবে।

জানা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে, তবে নেতিবাচক দিকও কম নয়। ফলে যেখানে এক সময় তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দী নেতৃত্ব ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। এখন সেখানে তাকেই টেক্কা দিতে মাঠে নেমেছেন তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান  সোনীয়া সরদার ও কামারগাঁ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল-মামুনপ্রমুখ। ফলে চেয়ারম্যান ময়নার  সুখের ঘরে এখন দাউ দাউ করে  জ্বলছে দুুঃখের আগুন বলে মনে করছেন তৃণমুলের  নেতা ও কর্মী-সমর্থকেরা।স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে   এই তিন নেতা দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করেছেন। তাদের তৎপরতায়  আওয়ামী লীগে  স্পষ্টত বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এদিকে উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ময়নার শীতল সম্পর্ক নেতাকর্মীদের মনে অজানা আতঙ্কের সুত্রপাত হয়েছে। তানোরে যেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি ফারুক চৌধুরী নৌকা প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে প্রায় ৬ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন। সেখানে উপজেলা ভোটে প্রতিক ছাড়া নির্বাচনে ময়না কতটা সফল হবেন সেটা ভেবে নেতাকর্মীরা হতাশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নার বিরোধীতা করে  মামুনের সঙ্গে প্রকাশ্যে মাঠে সরব স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রথম সারির একাধিক জৈষ্ঠ নেতা ও কর্মী-সমর্থকগণ। এদিকে পরিস্থিতি উপলব্ধি করে এলাকায় ঘন ঘন ছোট-বড় নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ময়না। তবে তৃণমূলের কাছে থেকে  আশাব্যঞ্জক সাঁড়া পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। তৃণমুলের ভাষ্য একটা সময় আমন্ত্রণ জানিয়েও ছোটখাটো কোনো কর্মসুচিতে তাকে তেমন পাওয়া যায়নি।রাজনীতির মাঠে নিজের টলমল অবস্থা শক্ত করতেই তিনি এমন ঘন ঘন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া বলে মনে করছে একাংশের নেতাকর্মী।

তৃণমূলের অভিমত, চেয়ারম্যান ময়নার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পড়েছে চরম ঝুঁকির মূখে ? স্থানীয় সাংসদের আনুকুল্যে থাকায় দলীয় সমর্থন হয় তো তিনিই পাবেন। তবে নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের  কেমন সমর্থন পাবেন সেটা দেখার বিষয় ? ইতমধ্যে আওয়ামী লীগের আদর্শিক, প্রবীণ-ত্যাগী-পরিক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা তাকে ত্যাগ করেছে পাশপাশি তৃণমূলের সিংহভাগ তার ওপর থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে এতে আগামিতে তাঁর নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখায় কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান ময়না দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু অনুগতদের ওপর নির্ভর করে চলেছেন। যাদের সিংহভাগ জনবিচ্ছিন্ন।

কিন্ত্ত দলের প্রবীণ,ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের পরিবর্তে অবমূল্যায়ন করেছেন। এছাড়াও করোনা কালীন সময়ে সরকারি সহায়তা,মটর বাণিজ্যে, খাস পুকুর-জলাশয় নিয়ন্ত্রণ, মাতৃত্বকালীন ভাতা, এমপির বিশেষ বরাদ্দসহ ইত্যাদি নানা প্রকল্পে তার নয়ছয় ও গভীর নলকুপ অপারেটর বানিজ্যের কথা এলাকার মানুষের মূখে মূখে প্রচার রয়েছে। আবার স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, আত্মীয়করণ, অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড ও সুযোগসন্ধানীদের অধিক মূল্যায়ন করা হলেও প্রবীণ,ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হয়েও সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদার-গতিশীল করতে ব্যর্থ, আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর খবরদারী এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি তেমন কোনো ভুমিকা রাখতে পারেননি বলেও শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে একশ্রেণীর গভীর নলকুপ অপারেটরের জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচার সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাদের হাত থেকে পরিত্রাণের আশায় এসব সাধারণ মানুষ ময়নার বিকল্প নেতৃত্বের দিকেই ঝুঁকছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।এছাড়াও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কাঁচি-হাতুড়ি ইত্যাদি বিশষণ দিয়ে সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা ও একটি বিশেষ পক্ষের লোক চিহ্নিত করে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্রার্থী কে সেটা বিবেচ্য নয়, এমপির সমর্থিত প্রার্থীকে ঠেকাতে হবে এটাই এসব বঞ্চিত মানুষের বোঝানো হচ্ছে। এ ইস্যু নিয়ে উপজেলা ভোটে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অসমর্থিত একটি সুত্র জানান, ইতমধ্যে উপজেলার তানোর ও মুন্ডুমালা পৌরসভা এবং পাঁচন্দর, তালন্দ ও সরনজাই ইউপি  আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা ও কর্মী সমর্থকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাচনে  মামুনকে সমর্থন দিয়ে মাঠে নেমেছেন। এমনকি এমপিবিরোধী গ্রুপের নেতা ও কর্মী-সমর্থকেরা ময়নার পরাজয় নিশ্চিত করে প্রতিশোধ নিতে স্বাপক্ষ ত্যাগ করতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় এবার ময়নার বিজয়ের আশাক্ষীণ বলে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, তরুণ, মেধাবী, পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতার ইচ্ছে প্রকাশ করে নির্বাচনের প্রস্ত্ততি নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও দু'বারের ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক খেলাধুলা ও সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে তরুণ, পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ ও মেধাবী নেতৃত্ব হিসেবে তার একটা নিজ্বস্ব ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে। এদিকে ভোটারদের অধিকাংশ তরুণ,এসব ভোটারদের মানসিকতা ও পচ্ছন্দ বিবেচনা করে তরুণ নেতৃত্ব মামুনকে নির্বাচনে বিজয়ী করার লক্ষ্যে মরণ পণ করে নেতাকর্মীরা মাঠে  নেমেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। মানুষ যখন ডুবে যায় তখন খড়কুটো ধরে বাঁচতে চাই। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন যাবত বঞ্চিত নেতাকর্মীরা এবার মামুনকে খড়কুটো বিবেচনা করে তাকে ধরেই বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।

এদিকে তৃণমুলের মতামত ও ভোটারদের মানসিকতা বিবেচনা করে দেখা গেছে বিজয়ী হবার দৌড়ে মামুন অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। ওদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, রাজনীতির মাঠে চেয়ারম্যান ময়নার  কিছুটা ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে তার আগের সেই জনপ্রিয়তা এখন আর নেই। যে কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী তাঁর বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে মামুনে ঝুঁকছেন।

স্থানীয়রা বলছে, বর্তমানে ভোটের মাঠের যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে কলমা, বাধাইড় ও চাঁন্দুড়িয়া ইউপিতে এমপি অনুসারীরা এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে তানোর এবং মুন্ডুমালা পৌরসভা, তালন্দ, সরনজাই,পাঁচন্দর ও কামারগাঁ ইউপিতে এমপিবিরোধী অনুসারীরা এগিয়ে রয়েছে। এমপি বিরোধী শিবিরে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী, সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, সাবেক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুস সালাম, তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র ইমরুল হক,প্যানেল মেয়র আরব আলী,মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান,কলমা ইউপি চেযারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধুরী, তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও পাঁচন্দর ইউপি আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক বিজেন কর্মকারপ্রমুখ। যাদের নিজস্ব একটা জনসমর্থন বা ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার প্রমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে।এমপিবিরোধীদের দাবী রাজনীতিতে তাদের অস্থিত্ব ধরে রাখতে মামুনের বিজয় ব্যতিত কোনো বিকল্প নাই।