ক্যামেরার সামনে তারকাদের হাসিমুখ। আর নেপথ্যে থাকে অন্য এক জীবন। সেখানে কখনও ভিড় করে একাকিত্ব। জীবনে চলার পথে তৈরি হয় নতুন সম্পর্ক। আবার কখনও বা হঠাৎই সমস্ত উদ্দীপনা নিভেও যায়। কিন্তু থেমে থাকে না জীবনের পথচলা। সোমবার সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায়ের তৃতীয় বিয়ের খবরে তোলপাড় হয়েছে টলিপাড়া। তবে অনুপম প্রথম নন, বাঙালি তারকা জগতে দর্শকদের পরিচিত অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা অন্তত তিন বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন।
তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন কিশোর কুমার। জীবদ্দশায় তিনি চার বার বিয়ে করেছিলেন। ১৯৫০ সালে গায়িকা-অভিনেত্রী রুমা গুহঠাকুরতাকে বিয়ে করেন কিশোর। কিন্তু আট বছর পর তাঁরা সম্পর্কে ইতি টানেন। তত দিনে ইন্ডাস্ট্রিতে মধুবালার সঙ্গে কিশোরের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৬০ সালে মধুবালাকে বিয়ে করেন কিশোর। ১৯৬৯ সালে মধুবালার মৃত্যুতে তাঁদের দাম্পত্য শেষ হয়। এর পর কিশোরের জীবনে আসেন অভিনেত্রী যোগিতা বালি। ১৯৭৬ তাঁদের বিয়ে হয়, কিন্তু এই বিয়ে মাত্র ২ বছরের জন্য টিকে ছিল। ১৯৮০ সালে অভিনেত্রী লীনা চন্দ্রভারকরকে বিয়ে করেন কিশোর। আমৃত্যু লীনার সঙ্গেই ছিলেন তিনি।
এক সময়ের বড় পর্দার হিট জুটি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও দেবশ্রী রায় বাস্তবেও সংসার পেতেছিলেন। ১৯৯২ সালে দু’জনের বিয়ে হয়। কিন্তু তাঁদের দাম্পত্যের মেয়াদ মাত্র তিন বছরের। এর পর সুপারস্টারের জীবনে আসেন অন্য নারী। ১৯৯৭ সালে অপর্ণা গুহঠাকুরতাকে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। তাঁদের কন্যার নাম প্রেরণা। কিন্তু ২০০২ সালে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। পরবর্তী কালে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। তাঁদের ছেলের নাম তৃষাণজিৎ।
অভিনেত্রী তথা টলিপাড়ার বর্ষীয়ান পরিচালক অপর্ণা সেনের জীবনেও তিনটি বিয়ে। সঞ্জয় সেনের সঙ্গে অপর্ণার প্রথম বিয়ে হয়। কিন্তু এই বিয়ে খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এর পর লেখক-সাংবাদিক মুকুল শর্মাকে বিয়ে করেন অপর্ণা। কিন্তু পরে তাঁরা যৌথ সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদের পথেই হাঁটেন। অপর্ণা-মুকুলের সন্তান কঙ্কণা সেন শর্মা প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। এই মুহূর্তে অধ্যাপক-লেখক কল্যাণ রায়ের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে রয়েছেন অপর্ণা।
টলিপাড়ায় কাজের পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের জন্যও একাধিক বার খবরের শিরোনামে উঠে আসেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। ২০০৩ সালে পরিচালক রাজীবকুমার বিশ্বাসকে বিয়ে করেন শ্রাবন্তী। তাঁদের সন্তান অভিমন্যু চট্টোপাধ্যায় ওরফে ঝিনুক এখন সমাজমাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়। শ্রাবন্তী ও রাজীবের বৈবাহিক সম্পর্ক কিন্তু ২০১৬ সালে ভেঙে যায়। এর পর শ্রাবন্তীর জীবনে আসেন মডেল কৃষ্ণ ব্রজ। শ্রাবন্তীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই যৌথ সম্মতিতে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। ২০১৯ সালে বিমানকর্মী ও জিমের কর্ণধার রোশন সিংহের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন শ্রাবন্তী। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত শ্রাবন্তী ও রোশন বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। শোনা যায়, নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন অভিনেত্রী। তবে শ্রাবন্তী আবার বিয়ে করবেন কি না, তা নিয়ে অনুরাগীদের কৌতূহল রয়েছে।
তৃতীয় বিয়ের কথা প্রকাশ হতেই এই মুহূর্তে চর্চায় রয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক। ১৪ ফেব্রুয়ারি অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের সঙ্গে তিনি আইনি বিয়ে সেরেছেন। আগামী ৬ মার্চ শহরে তাঁদের সামাজিক বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু দীর্ঘ দিন আগে অভিনেত্রী অনিন্দিতা দাসকে বিয়ে করেন কাঞ্চন। সেই দাম্পত্যের মেয়াদ ছিল প্রায় আট বছর। এর পর কাঞ্চনের জীবনে আসেন অভিনেত্রী পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কয়েক বছর আগে তাঁদের মধ্যেও দাম্পত্য কলহের সূত্রপাত ঘটে। অভিযোগের পালা মিটিয়ে অবশেষে চলতি বছরে ১০ জানুয়ারি আইনি পথে কাঞ্চন-পিঙ্কির বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ছেলে ওশ নাবালক বলে মায়ের সঙ্গেই থাকছে। অন্য দিকে, কাঞ্চন জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রাখতে প্রস্তুত।
সব শেষে অবশ্যই আসবে অনুপম রায়ের নাম। ‘অটোগ্রাফ’ ছবির মাধ্যমে টলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন সঙ্গীতশিল্পী অনুপম। প্রথম ছবিতেই জনপ্রিয়তা। তখন থেকেই শোনা যায়, অনুপম বিবাহিত। তবে নিজের প্রথম বিয়ে নিয়ে খুব একটা প্রকাশ্যে কথা বলেননি তিনি। ২০১৫ সালে প্রেমিকা সমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন শিল্পী। কিন্তু ২০২১ সালে সমাজমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়ে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেন। গত বছর ২৭ নভেম্বর অভিনেতা পরমব্রত চট্টপাধ্যায়কে বিয়ে করেন পিয়া। আর আগামী ২ মার্চ টলিপাড়ার গায়িকা প্রস্মিতা পালের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতে চলেছেন অনুপম।