রাজশাহীর পুঠিয়া-সরিষাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় কতর্ৃৃপক্ষ আখ ক্রয়ের জন্য সুগার মিলের কাছে খেলার মাঠ ভাড়া দিয়েছেন। প্রতিবছর আখ ক্রয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত খেলার মাঠ বন্ধ থাকে। আর রক্ষায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানাগেছে, গত একযুগেরও বেশী সময় থেকে স্কুল পরিচালনা কমিটি খেলার মাঠটি নাটোর সুগারমিলের নিকট (মাসে ৬ হাজার টাকা) ইজারা দিয়ে আসছেন। আর সুগার মিল বছরের দুই থেকে চারমাস পর্যন্ত এই মাঠ আখ ক্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করেন। এ সময় পুরো মাঠজুড়ে আখ কেনা বেচা হওয়ায় শিক্ষাথীদের মাঠে খেলাধূলা বন্ধ থাকে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাইদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের খেলাধূলা বন্ধ করে স্কুল কর্তুৃপক্ষ প্রতিবছর খেলার মাঠ ইজারা দিয়ে দেয়। গত কয়েক বছর থেকে এই মাঠে আখ ক্রয় কেন্দ্র বন্ধ করতে বাধা দেয়া হয়। এমনকি উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফয়সালা হয়নি। তবে কয়েক বছর থেকে খেলার মাঠ ছেড়ে অন্যত্র ক্রয়কেন্দ্র চালু করতে খরচ বাবদ আখ চাষিদের নিকট থেকে দুইমণ করে আখ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে সেই আখ বিক্রির টাকাও গায়েব হয়ে যাচ্ছে।
নাজমুল ও তৈয়ব আলী নামের দুইজন শিক্ষার্থী বলেন, মাঠে যতদিন আখ ক্রয় চলবে ততদিন তাদের খেলাধূলা বন্ধ থাকে। তারা বলেন, প্রায় দুইমাস মাঠে খেলাধূলা না করতে স্কুল শিক্ষকরা তাদের নিষেধ করে দিয়েছেন।
সরিষাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুর রব বলেন, আখ ক্রয় কেন্দ্র চালু হওয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বাধা দিয়েছিলেন। তবে এই মুহুর্তে অন্যত্র ক্রয় কেন্দ্র সরানো জটিতলা দেখা দেয়। তাই কৃষকদের আখ বিক্রি বিষয়টি চিন্তা করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ বছরের জন্য অনুমতি দেন। আর নতুন আখ ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করার অর্থের বিষয়টি বিগত স্কুল পরিচালনা কমিটি বলতে পারবেন।
নাটোর সুগার মিল এর সিআইসি ও আখ ক্রয়কেন্দ্রের ইনচার্য জীবন কুমার প্রামানিক বলেন, তারা মাসিক একটি ভাড়ায় স্কুল মাঠে আখ ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। আর এটা দীর্ঘদিন থেকে এই মাঠেই আখ ক্রয় কার্যক্রম চলে আসছে। তিনি বলেন, এখানে থেকে ক্রয় কেন্দ্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে তারা জায়গা খুঁজছেন। অন্যত্র ক্রয়কেন্দ্র চালু করতে বিগত সময় কৃষকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত আখ নেয়া হয়েছে তা শুনেছি। তবে কে বা কাহারা সে আখ বিক্রির অর্থ নিয়েছেন তারা তিনি জানেন না।
সরিষাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষিকা বলেন, মাঠটি হাই স্কুলের হলেও আমাদের বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা এখানেই খেলাধুলা করে। প্রতিবছর আখ ক্রয় মৌসুমশুরু হলে আখক্রয় কেন্দ্রের লোকজন বাচ্চাদের মাঠে নামতে নিষেধ করেন।
সরিষাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফসার আলী সরকার খেলার মাঠ ইজারা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিনি এই স্কুলের দ্বায়িত্বে আসার অনেক আগ থেকে এই মাঠ সুগারমিলের কাছে বরাদ্দ দেয়া হয়। যা এখনো চলমান। তবে আগামি বছর থেকে আর এই মাঠ ইজারা দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা আখতার জাহান বলেন, স্কুল মাঠ ইজারা দিয়ে আখ ক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি তার জানা নেই। আর তিনি যোগদানের পর এ বিষয়ে কেও কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে আগে কোনো অভিযোগ দেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।