২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০২:২৪:৫৬ পূর্বাহ্ন


রাণীনগরে চেয়ারম্যান জাহিদের উপর হামলার ঘটনায়, তিন দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ
কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ) :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১১-২০২৩
রাণীনগরে চেয়ারম্যান জাহিদের উপর হামলার ঘটনায়, তিন দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ রাণীনগরে চেয়ারম্যান জাহিদের উপর হামলার ঘটনায়, তিন দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ


নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জাহিদের উপর হামলাকারীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। গত তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাদেরকে সনাক্তও করতে পারেনি পুলিশ। তবে হামলাকারীদের সনাক্তসহ গ্রেফতার করতে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ। 

গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পরিষদ কার্যালয়ে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জাহিদকে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এসময় একজন নারী সদস্য,সচিব,ও অন্যান্ন কর্মচারীরা ছাড়া পরিষদে ছিলেননা অন্য সদস্যরা। বর্তমানে চেয়ারম্যান জাহিদ ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে পারিবারিক সুত্র জানিয়েছে।

ঘটনার সময় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত ও প্রত্যক্ষদর্শী পরিষদের সচিব তরিকুল ইসলাম বলেন, কার্যালয়ে বসে চেয়ারম্যান অফিসিয়াল কাজ কর্ম করছিলেন। এসময় প্রথমে একজন মাস্ক পরা প্রায় ৫০ বছর বয়সি একজন লোক প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের সাথে কথা আছে বলে আমাকে বের করে দেয়। এর পরই আরো একজন হেলমেট ও মাস্ক পরিহিত ৩০/৩৫ বছর বয়সি যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে কার্যালয় প্রবেশ করেই চেয়ারম্যানকে আঘাত করতে থাকে। এসময় পরিষদ চত্বরে আরো ৩/৪জন হেলমেট ও মাস্ক পরিহিত যুবকরা সেবা প্রত্যাশী ও পরিষদের অন্যান্য কর্মচারীদের ধারালো অস্ত্র উচিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। এসময় আমাকেও অস্ত্র হাতে ধাওয়া করলে দৌড়ে পালিয়ে যাই। চেয়ারম্যান জাহিদ আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পরিষদের গেটের বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীরাও দ্রুত পালিয়ে যায়। 

তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা এসব ঘটনা সর্বোচ্চ ২থেকে ৩মিনিটের মধ্যেই ঘটিয়ে তিনটি মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। পরে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে প্রথমে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তীতে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতেই তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করে।

ইউনিয়ন পরিষদে কোন সিসি ক্যামেরা নেই জানিয়ে তরিকুল ইসলাম জানান, হামলাকারী একজন প্রায় ৫০ বছর বয়সি ছিলো। এছাড়া আর সবাই ৩০/৩৫ বা ৪০ বছরের যুবক হবে। তবে তাদেরকে কেউ চিনতে পারেনি। ওই হামলায় চেয়ারম্যানের ডান হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্নসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বর জখম করে।

সংরক্ষিত নারী সদস্য নাসিমা আক্তার জানান, তিনি প্রতিদিনের মতো পরিষদে এসে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ করেই চিৎকার চেচামেচি শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখেন ৫/৬জন হেলমেট ও মাস্ক পরিহিত দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র হাতে  চেয়ারম্যানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করছে। এসময় উপস্থিত সেবাপ্রত্যাশী ও কর্মচারীরা দিকবিদিক দৌড়ে পালানোর জন্য চেষ্টা করছেন। এটা দেখে ভয়ে তিনি সচিবের কক্ষে আবারও ঢুকে পরেন এবং দরজা বন্ধ করে দেন। তবে তিনি বলেন, ঘটনার সময় একমাত্র তিনি ছাড়া অন্য ১১জন ইউপি সদস্যদের মধ্যে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।  

এবিষয়ে ওই ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ(দফাদার) গোলাপ চন্দ্র জানান, ঘটনার সময় তিনি পরিষদের বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যাস্ত ছিলেন। তবে লোকজনের বিভিন্ন দিক ছোটাছুটি দেখে তিনি পরিষদের কার্যালয়ের দিকে দৌড়ে আসতেই দূর্বৃত্তরা তাকেও আক্রমন করার চেষ্টা করে। উপায় না দেখে তিনি ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন।  এসময় দূর্বৃত্তরা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে যায়। 

ঘটনার দিন একসাথে ১১জন ইউপি সদস্য উপস্থিত না থাকার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন,অন্যদের বিষয়ে আমি বলতে পারবোনা। তবে আমি ব্যক্তিগত কাজের জন্য পরিষদে ছিলাম না। কিন্তু কারা,কেন হামলা করেছে তা বলতে পারছিনা।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পরিষদের ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১১জন মিলে গত ৭-৮মাস আগে দুই দফা অনাস্থা এনেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। তবে তাদের সকলের সাথে বর্তমানে সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো বলে দাবী করছেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা।

পারিবারিক সুত্র জানায়, জাহিদুর রহমান জাহিদ পারইল ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। গত ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। 

এদিকে পারিবারিকভাবে বা অন্যদের সাথে দ্বন্দ্ব নেই জানিয়ে ঘটনার দিন জাহিদের পরিবার থেকে বলা হয় বিএনপির রাজনীতি করার কারনে আওয়ামীলীগের লোকজন হামলা চালাতে পারে। তবে এমন ধারনার কথা  উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ দুলু অস্বীকার করেছেন।

জাহিদের স্ত্রী শ্যামলী আক্তার বলেন, জাহিদের পিঠ, কোমর এবং উরুতে প্রায় ৯টি স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুত্বর আঘাত করা হয়েছে। এছাড়া ডান হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে জাহিদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মূমুর্ষ অবস্থায় রয়েছেন। চেয়ারম্যান সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত এঘটনায় আর কিছু বলতে পারবেননা বলে জানান তিনি। 

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বলেন, চেয়ারম্যানের উপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এঘটনায় কেউ গ্রেফতার নেই জানিয়ে বলেন, হামলাকারীদের সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে এবং ঘটনাটি সুষ্ঠু ভাবে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।