২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১১:১৩:০৪ পূর্বাহ্ন


আনিসা-রুমনের প্রেমকাহিনী সিনেমাকেও হার মানায়!
সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৩-২০২২
আনিসা-রুমনের প্রেমকাহিনী সিনেমাকেও হার মানায়! ফাইল ফটো


প্রেম মানেনা জাত কিংবা ধর্ম। প্রেমের কবলে পড়ে কেউ ছাড়ে ঘর-বাড়ি কেউবা বাবা-মা। আতকিয়া আনিসার বেলাতেও ঘটেছে এমনটাই। প্রেমিক রুমন হোসেনকে বিয়ে করার পরে তাকে কাছে পাবার জন্য ছেড়েছে ঘর-বাড়ি সহ বাবা-মাকে। কিন্তু বিধি বাম! প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েও বয়স না হবার যন্ত্রনা মনে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যেতে হয়েছে সেভ হোমে।

নওগাঁ সদর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দেয়া বয়সের সনদ অনুসারে প্রেমিক ও প্রেমিকার বিয়ের বয়স হলেও জন্মনিবন্ধন অনুসারে বয়স হয়নি বলে জানা গেছে। তার একমাত্র চাওয়া স্বামী রুমন ও রুমনের পরিবার।

জানা গেছে, আতকিয়া আনিসা। মান্দা উপজেলার কাশোপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মৈনম স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী। অন্যদিকে তার স্বামী রুমন হোসেন সাপাহার উপজেলার লালচাঁন্দা গ্রামের বাসিন্দা ও উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মিনারুল ইসলামের ছেলে। তারা সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই-বোন হওয়ায় তাদের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক তৈরী হয়। যা পরবর্তীতে প্রেম-ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। নিজেদের ভালোবাসাকে সফল করতে  ২০১৯ সালে গাজীপুরে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। এমনকি কাবিননামা পর্যন্ত করেন। পরবর্তী সময়ে যে যার মতো চলাফেরা করতেই থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘর সংসার করার উদ্দ্যেশ্য নিয়ে সকলের অগোচরে  ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দু’জনে পালিয়ে যায় ।বিষয়টি জানতে পেরে আনিসার বাবা একেএম মাহবুবুল্লাহ্ বাদী হয়ে মান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে আনিসার স্বামী রুমন গ্রেফতার হয়। সেসময় আনিসা তার বাবা-মার কাছে যেতে অস্বীকার করলে  বিজ্ঞ আদালত তাকে সেভ হোমে পাঠান। যে মামলার চার্জশীট বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করে  মান্দা থানা পুলিশ। এঘটনার দেড়মাস পরে আতকিয়া আনিসা সেভ হোম থেকে তার বাবার জিম্মায় চলে আসে। পরে রুমন হোসেন তিনমাস পরে আদালত থেকে জামিন পায়। জামিন পাওয়ার পরে তাদের দু’জনের মধ্যে আবারো কথাবার্তা শুরু হয়। যার সূত্র ধরে আনিসা আবারো রুমনের সাথে সংসার করার উদ্দেশ্য নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা দু’জনে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নিক গিয়ে আইনগত ভাবে আবারো নতুন ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।এসময় আনিসা তার পূর্বের এক্স-রে রিপোর্ট অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এফিডেফিটের মাধ্যমে বয়সের প্রমাণ পত্র নেয়।

আনিসা তার এফিডেফিডের মাধ্যমে জানান যে, তার বয়স সাল ২০০৩ সাল হলেও তার বাবা একেএম মাহবুবুল্লাহ রুমন ও তার পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য জন্মসাল ২০০৫ সালে তৈরী করে বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করে।

এদিকে দ্বিতীয়বার মেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তার বাবা আবারো বাদী হয়ে আদালতে অপহরন মামলা করতে যায়। কিন্তু একবার মামলা চলমান থাকায় বিজ্ঞ আদালত সে মামলা গ্রহন করেননা। পরে সেখান থেকে ফিরে এসে মান্দা থানায় পুনরায় রুমনের পরিবারের সকলকে আসামী করে অপহরন মামলা দায়ের করেন।

মামলার কথা জানতে পেরে আনিসা তার সকল প্রমাণপত্র নিয়ে আদালতে তার স্বামীর কাছে জিম্মা চেয়ে আত্মসমর্পন করেন। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত কারো জিম্মায় না দিয়ে আবারো দ্বিতীয়বারের মতো সেভ হোমে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন।  

আদালতে যাবার পূর্বে আতকিয়া আনিসা সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয়বার আদালত তাকে সেভহোমে নিলে সেভহোম থেকে বেরিয়ে স্বামী রুমন হোসেনের সাথে ঘর সংসার করতে চান। রুমনকে ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয় তার। ঘনিষ্ট আত্মীয় হওয়ায় তাদের প্রেম দৃঢ় হয়। যা পরবর্তীতে স্বা-মী স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয়। আতকিয়া আনিসা পিতামাতার একমাত্র মেয়ে হয়েও ভালোবাসার মানুষের জন্য দ্বিতীয় বার আবারো আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সেভ হোমে গেছে।

আনিসার বাবা এ কে এম মাহবুবুল্লাহ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার মেয়ের বিবাহের বয়স হয়নি। তাকে অপহরণ করা হয়েছে। মেয়ের স্বেচ্ছায় প্রেমের টানে চলে যাবার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমার মেয়ে আনিসার  বয়স কম তাই এসব বলছে।

রুমনের বাবা মিনারুল ইসলাম বলেন,শ্বশুর বাড়ির জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। তিনি সরকারী চাকুরী করেন। তার চাকুরীর ক্ষতি করার জন্য আপন ভায়রা এ কে এম মাহাবুবুল্লাহ বারবার এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে হয়রানী করছেন। সম্পতির বিরোধের ধরে আমার আপন সম্বন্ধী আঃ খালেক আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি করছে। এতদসংক্রান্ত বিষয়ে আমার স্ত্রী রশিদা বাদী হয়ে আদালতে ১০৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছে।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, এক্স-রে রিপোর্ট অনুসারে যে বয়স আসছে সেই বয়সটি আমরা উল্লেখ করে থাকি। এখানে কারো কোনো হাত নেই । আদালত ওই সনদ মানবেন কি না সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয় বলেও তিনি জানান।

মান্দা থানার ইস্পক্টর (তদন্ত) হাবিবুর রহমান বলেন, ওই মেয়ের মামলা সম্পর্কে তদন্ত করে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে। মেয়ের বাবা আবারও অপহরণ মামলা দায়ের করেছে। কারণ সে দ্বিতীয় বার আবারও প্রাপ্ত বয়স না হতে চলে গিয়েছে । মেয়ের বাবা আবারও অপহরন মামলা করলে আমাদের করার কিছু নাই।  

মান্দা থানা অফিসার ইনচার্জ শাহিনুর রহমান বলেন,একজন ব্যক্তি যখন একাধিক বার হত্যা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক বার হত্যা মামলা দায়ের করতে হয়। ভিকটিমের বাবা থানায় মামলা করতে আসলে সে মামলা নিতে হবে।

এদিকে একই ঘটনায় একই থানায়  দুইবার কিভাবে মামলা হয় এমনটা প্রশ্ন এলাকার অভিজ্ঞ মহলের।

রাজশাহীর সময় / এএইচ