প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জনগণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি। প্রয়োজনে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য বাবার মতো রক্ত দেব। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। রোববার নরসিংদী মোসলেমউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারকে ব্যর্থ করতে তারা (বিএনপি-জামায়াতচক্র) চক্রান্তে নেমেছে। কিন্তু তারা কীভাবে সরকারকে হটাবে? চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে সরকারের পতন ঘটনো যাবে না। তিনি বলেন, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম। একসময় দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত। কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না। আন্দোলন করে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষা করেছি। প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে যাতে স্কুলে যায়, সে ব্যবস্থা করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তায় জোর দিয়েছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মায়ের নামে মোবাইল ফোনে টাকা চলে যায়, উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দিচ্ছি। শিক্ষায় আমরা অনেক গুরুত্ব দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান-সব আওয়ামী সরকার করে দিয়েছে। আমরা সামাজিক সুরক্ষা দিচ্ছি। জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ পাচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি পরিবারে কার্ড করে দিয়েছি যেন ভর্তুকি মূল্যে কিনতে পারে। প্রতিটি ঘর আলোকিত করার কথা দিয়েছিলাম-আমরা সারা দেশে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিংয়ে যুক্ত তারেক রহমান লন্ডনে বসে এত টাকা কোথা থেকে পায়? নভেম্বরে ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা হচ্ছে আর তারা (বিএনপি-জামায়াত) অবরোধ দিচ্ছে। তাদের সামনে আসার সাহস নেই। ইসরাইলের হামলার মতো আমাদের দেশেও হাসপাতালে হামলা করে তারেকের চেলারা। আগুন-সন্ত্রাসীদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির ক্ষমতায় আসা মানেই দেশ পেছনে যাওয়া। তিনি বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। আর বিএনপির কাজ ধ্বংস করা। ১৫ বছরে কত পরিবর্তন হয়েছে, তা জনগণ দেখছে। নরসিংদী তাঁত, সবজি, বিখ্যাত সাগরকলা যেন দ্রুত ঢাকা যায়, সে ব্যবস্থা করেছি। এ সময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, আপনাদের ১০টি প্রকল্প উপহার দিয়েছি। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ৮০০ থেকে বাড়াতে বাড়াতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করেছে। অন্য কোনো সরকার তাদের মজুরি বাড়ায়নি। প্রতিটি গ্রাম যেন শহর হয়, শহরের সুবিধা যেন গ্রামের মানুষ পায়, এজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আইটি ট্রেনিং ব্যবস্থা করেছি। এতে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে। ঘরে বসে আয় করছে। সরকারি চাকরির বাইরে যারা আছেন, তাদের সবার জন্য সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা করেছি। ১০৯টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। যেন আমাদের ছেলে-মেয়েরা কাজ করতে পারে। বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। তাই যারা বেকার, তারা ব্যবসা করেন, নিজেরা আয় করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমার বাবা, মা, ভাইদের, স্বজনদের হারিয়েছি। আমি দেশে আসতে পারিনি। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। একপ্রকার জোর করেই দেশে ফিরেছিলাম। দেশে ফিরেছিলাম একটা প্রত্যয় নিয়ে। সেটা হলো, যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সেটা ব্যর্থ হতে দেব না। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমার লক্ষ্য।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় জনসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। এছাড়া বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, নজরুল ইসলাম হিরু এমপি, জহিরুল হক ভূঁইয়া এমপি, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ। নরসিংদী সংরক্ষিত আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
নরসিংদী জনসমুদ্র : ১৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় গোটা নরসিংদী জেলায়। সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা রং-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন, রঙিন গেঞ্জি ও টুপি পরে জনসভাস্থলে হাজির হন। বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে জনসভাস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে জনসভা রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। স্টেডিয়ামে মানুষের সংকুলান না হওয়ায় নানা জায়গায় হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন।