দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর থেকে প্রথমবারের মতো পণ্য রপ্তানি হতে যাচ্ছে। এই শিল্পনগরের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত চীনের মালিকানাধীন কেপিএসটি শু (বিডি) কোং লিমিটেডকে গতকাল বুধবার দুপুরে পণ্য রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বেপজা। সব প্রক্রিয়া শেষে আজ বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো এই শিল্পনগর থেকে পণ্য রপ্তানি শুরু হচ্ছে।
জুতার অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রথম চালানে প্রায় তিন লাখ ৪৯৩ হাজার মার্কিন ডলারের ইভা শিট রপ্তানি হবে।
তবে এই পণ্য সরাসরি বিদেশে যাবে না বলে জানালেন বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘বিদেশে রপ্তানির যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই চালানটি যাবে ঢাকার গাজীপুরের ব্লু ওশান ফুটওয়্যার নামের একটি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে। মূলত বিদেশি বায়ারের মনোনীত কম্পানি হিসেবে কেপিএসটি শুজ থেকে ব্লু ওশান ফুটওয়্যার জুতার অ্যাকসেসরিজ নিচ্ছে। একটি বন্ডেড প্রতিষ্ঠান থেকে আরেকটি বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে পণ্য রপ্তানিকে আমরা ডিমড এক্সপোর্ট বা প্রচ্ছন্ন রপ্তানি বলি।
বেপজা সূত্র জানায়, গত ৩ নভেম্বর থেকে কেপিএসটি শু (বিডি) কোং লিমিটেড স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। ৮.০৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে কম্পানি এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে ৩.৪৮ মিলিয়ন ডলার। এরই মধ্যে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনের মালিকানাধীন ফ্যানকুন কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল কোং বিডি লিমিটেড ও কাইশি লিঙ্গারি বাংলাদেশ কোং লিমিটেড নামে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কম্পানিগুলোও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে বলে জানান জোনের প্রকল্প পরিচালক।
এর মধ্যে জুতার অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনকারী ফ্যানকুন কম্পোজিট বিনিয়োগ করবে ২.২ মিলিয়ন ডলার। তবে কাইশি লিঙ্গারি জোনের ১১টি প্লট নিয়ে ৬১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।
বেপজা সূত্র জানায়, এক হাজার ১৩৮ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তিন হাজার ৬০০ বর্গমিটারের ৫৩৯টি প্লট স্থাপন করা হবে। আড়াই শ প্লট বিনিয়োগ উপযোগী করা হয়েছে। এরই মধ্যে সাতটি দেশের ২৩টি কম্পানি এই জোনের ১৩৫টি প্লট বরাদ্দ পেয়ে গেছে।
এসব কম্পানি ৪৯৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের প্রথম রপ্তানিকে স্বাগত জানিয়েছে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এরই মধ্যে পাঁচটি কম্পানি উৎপাদনে গেছে। আরো কয়েকটি শিগগিরই উৎপাদনে যাবে। এর মধ্যে দেশের মধ্যে তারা পণ্য সরবরাহও শুরু করেছে। তবে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে প্রথম রপ্তানি এই শিল্পনগরের জন্য একটি শুভ সূচনা। শুনেছি তাঁদের আরো দুটি কম্পানি উৎপাদনে গিয়ে রপ্তানি শুরু করবে। সরকার যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরকে যে বিনিয়োগ হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছে, বেপজার এই উদ্যোগ সেটাকে সফলতা দেবে।’
বেজা সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জাপানি প্রতিষ্ঠান নিপ্পন স্টিল, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, এশিয়ান পেইন্টস, সামুদা ফুড, ম্যারিকো উৎপাদনে গেছে। এ ছাড়া বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ও মডার্ন সিনটেক্স শিগগিরই উৎপাদনে যাবে। তবে এই জোন থেকে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর রেলওয়ে ব্রিজের স্প্যান বসানোর জন্য গত বছরের মার্চে সর্বপ্রথম পণ্য সরবরাহ করে ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রডাক্টস লিমিটেড।
শ্রমঘন কারখানাগুলো চালু হলে কর্মী পাওয়া নিয়ে যদিও শঙ্কা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনে। এই আশঙ্কা থেকে বরাদ্দ নিয়ে এখনো বিনিয়োগে যাচ্ছে না তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এমন প্রশ্নের জবাবে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘সরকার যে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছে, আগামী সপ্তাহে হয়তো ইপিজেডের জন্য আলাদা কাঠামো ঘোষণা করা হবে। তখন আশা করছি, শ্রমিক নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।’