যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে স্বাস্থ্যবীমা জালিয়াতকারীকে আবারও বাংলাদেশ সোসাইটির নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করায় প্রবাসীদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার (৫ নভেম্বর) সোসাইটির কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীদের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ড অব ট্রাস্টির প্রথম পূর্ণাঙ্গ সভায় সংগঠনের সভাপতি ও বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য মোঃ আব্দুর রব মিয়া স্বাস্থ্যবীমা জালিয়াতকারী এম. আজিজসহ ট্রাস্টির ১২ সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করান। স্বাস্থ্যবীমা জালিয়াতকারীকে বাংলাদেশ সোসাইটির নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করায় প্রবাসীদের মাঝে বইছে আলোচনার ঝড়।
শপথ গ্রহণ শেষে বোর্ড অব ট্রাস্টির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রথম সভাতেই ট্রাস্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। ট্রাস্টির চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী এম. আজিজ ও আজিমুর রহমান বোরহান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ট্রাস্টি সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সাবেক সভাপতি ও ট্রাস্টির চেয়ারম্যান মোঃ আজিজ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
স্বাস্থ্যবীমা চুরি ও জালিয়াতির অপরাধে ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম. আজিজকে সস্ত্রীক গ্রেপ্তার করেন নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি পুলিশ। নিউ ইয়র্কের পার্শ্ববর্তী গ্লেন হেডের বাসিন্দা তিনি। উক্ত ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে আজিজের স্ত্রী আনা খালেদ একই অপরাধে পুলিশ হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। ওই সময় নাসাউ কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেডেলিন সিঙ্গাস বাংলাদেশি এ দম্পতি গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম. আজিজ ও তার স্ত্রী আনা খালেদ যুক্তি করে প্রথম স্ত্রীর পরিচয় চুরি করে হাসপাতালে ভর্তিসহ ফার্মাসি থেকে ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র উত্তোলন করে আসছিল। বিষয়টি হাসপাতাল ও ফার্মাসির কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে পুলিশে জানানো হয়।
ওইদিন নাসাউ কাউন্টির পুলিশ কমিশনার প্যাট্রিক রেইডার বলেছিলেন, নাসাউ কাউন্টির পুলিশ বিভাগ এবং নাসাউ কাউন্টির জেলা অ্যাটর্নি অফিস কর্তৃক গভীর তদন্তের পর স্বাস্থ্যসেবা বীমা চুরি ও জালিয়াতির অপরাধে উক্ত বাংলাদেশি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেন। এ ঘটনাটি অপরাধমূলক কার্যক্রম কমিয়ে আনার জন্য একটি প্রচেষ্টা এবং বড় উদাহরণ। এইভাবে আমরা স্থানীয় গ্লেন হেডের বাসিন্দা এবং তাদের বীমা জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষার করার চেষ্টা করি। যা প্রতি বছর এ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়ে থাকে।
নাসাউ কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেডেলিন সিঙ্গাস এক বিবৃতিতে বলেন, ২০১৪ সালে আ্জেজির প্রথম স্ত্রী উইনথ্রপ হাসপাতালের জরুরি রুমে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি সন্তানের জন্ম হয়। ওই সময় ডাক্তার তার মেডিক্যাল ইতিহাস তালিকাভুক্ত করে রাখেন। সম্প্রতি লং আইল্যান্ডের উত্তর শের ইহুদি হাসপাতালে আজীজের অন্য স্ত্রী একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এ সময় ঔষধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, কিন্তু তিনি ওষুধগুলি নির্দিষ্ট করতে পারেনিনি। হাসপাতালে ভর্তিকালে ডাক্তার যখন কোনো শিশুর জন্মগত অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞাসা করেন তখন আশ্চর্য হয়ে যায়।
মেডিক্যাল রেকর্ডের বিরক্তিকর মিশ্রণের ফলে অন্যের পরিচয় ও স্বাস্থ্যবীমা চুরির বিষয়টি সন্দেহ হয়। এম আজিজকে উক্ত মেডিক্যাল বিল ও জালিয়াতি ঘটনার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি সিঙ্গাস।
তিনি বলেন, উক্ত দম্পতি গ্লেন হেড ফার্মেসিতে গিয়েছিল ওষুধ কিনতে কিন্তু প্রেসক্রিপশনে যার নাম ছিল, ওষুধগুলো উত্তোলন করতে যান আরেকজন। ফার্মাসির সিসিটিভিতে তা ধরা পড়ে। পরে বিষয়টি পুলিশে অবগত করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া এম. আজিজের প্রথম ডিগ্রি পরিচয় চুরি এবং চতুর্থ ডিগ্রি স্বাস্থ্যসেবা জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। তিনি নগদ ৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে জামিন নেন।
অপর দিকে ২৮ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়া আনা খালেদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা জালিয়াতি, প্রথম ডিগ্রি পরিচয় চুরি, তৃতীয়-ডিগ্রি বীমা জালিয়াতি এবং চতুর্থ দফা স্বাস্থ্যসেবা ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়। ৪ হাজার ডলারের জামিন নামায় তিনিও নগদ ২ হাজার ডলারের দিয়ে জামিন নেন।
বোর্ড অব ট্রাস্টির শপথ নেওয়া অন্য সদস্যরা হলেন-এম. আজিজ, আক্তার হোসেন, আজিমুর রহমান বোরহান, মফিজুর রহমান, এমদাদুল হক কামাল, আব্দুল হাসিব হাসনু, ওয়াসি চৌধুরী, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, খোকন মোশারফ, শাহজাহান সিরাজী, জহিরুল ইসলাম মোল্লা, মোহাম্মদ আতোয়ারুল আলম উপস্থিত থেকে শপথ বাক্য পাঠ করেন। স্বাস্থ্যবীমা জালিয়াতকারীকে আবারও বাংলাদেশ সোসাইটির নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করায় নিউ ইয়র্কসহ পার্শ্ববর্তী অঙ্গঅরাজ্যগুলোর প্রবাসীদের মাঝে চলছে নানা আলোচনার।