ইসরাইল আর হামাসের মধ্যে চলছে যুদ্ধ। ইসরাইলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে রয়েছে শত শত দেহ। পশ্চিম তীরেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সেখানেও নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতাধিক। গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে ইসরাইলের সমালোচনা যেমন বেড়েছে, তেমনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহায়নুভূতি প্রকাশ করছেন অনেকেই। এবার তাদের পাশে দাঁড়ালেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।
অভিনয়ের পাশাপাশি সারা বিশ্বে সমাজসেবা করতে দেখা যায় অস্কার জয়ী এই অভিনেত্রীকে। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা করেছেন। ইনস্টাগ্রামে তিনি বলেন, “এটি একটি আটকে পড়া জনগোষ্ঠীর উপর ইচ্ছাকৃত বোমা হামলা যাদের পালানোর জায়গা নেই। গাজা প্রায় দুই দশক ধরে একটি উন্মুক্ত কারাগার এবং দ্রুত গণকবরে পরিণত হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে ৪০ শতাংশই নিষ্পাপ শিশু। পুরো পরিবারকে হত্যা করা হচ্ছে।”
জোলি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে লিখেছেন, “যদিও বিশ্ব দেখছে এবং অনেক সরকারের সক্রিয় সমর্থনে, লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক - শিশু, মহিলা, পরিবার - সম্মিলিতভাবে শাস্তি এবং অমানবিক করা হচ্ছে, যদিও তারা আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে খাদ্য, ওষুধ এবং মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবি অস্বীকার করা এবং উভয় পক্ষের উপর একটি চাপিয়ে দেওয়া থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বাধা দেওয়া, বিশ্ব নেতারা এই অপরাধে জড়িত।”
তিনি ইসরায়েলের বিমান হামলার পরে বিধ্বস্ত জাবালিয়ার একটি ছবি শেয়ার করেছেন, তারপরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার দ্বারা শরণার্থী শিবিরের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। এতে লেখা ছিল, “গাজা উপত্যকার আটটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে জাবালিয়া শরণার্থী শিবির সবচেয়ে বড়। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর, শরণার্থীরা শিবিরে বসতি স্থাপন করেছিল, বেশিরভাগই দক্ষিণ ফিলিস্তিনের গ্রাম থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। ক্যাম্পের আয়তন মাত্র ১.৪ বর্গ কিলোমিটার। ১১৬.০১১ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শুধুমাত্র জাবালিয়া ক্যাম্পেই আছে, ১৯৪৮ সালের সংঘাতের ৭৫ বছর পর।”
এছাড়া আগের একটি পোস্টে, অ্যাঞ্জেলিনা বলেছিলেন যে, ইসরাইলরা যা ঘটাচ্ছে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। যুদ্ধ বাড়লেও ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সেখানে মৌলিক মানবাধিকারও নেই। আশ্রয় নেয়ার জন্য সীমান্ত পার হতে হবে, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এই হামলার জবাবে সেদিন থেকে গাজায় অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। তিন সপ্তাহ পরও সেই হামলা অব্যাহত রয়েছে। বিমান থেকে প্রতি মিনিটে ফেলা হচ্ছে ছয়টি বোমা। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে। আর আহত হয়েছেন অন্তত ২০ হাজার।
উল্লেখ্য, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অভিনয়ের পাশাপাশি মানবিক কাজে অংশ নেওয়ার জন্য সুপরিচিত। তিনি 'গার্ল, ইন্টারাপটেড' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ১৯৯৯ সালে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জেতেন। এছাড়াও তিনি তিন বার গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড জেতেন। ২০০১ সালে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ পান জোলি। এই দায়িত্বের অংশ হিসেবে তিনি বেশ কয়েকটি দারিদ্র্যপীড়িত দেশ সফর করেন।