‘গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলা চালিয়ে আমার ভাতিজাসহ তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ওই শরণার্থী শিবিরে আমার ভাতিজা মাহমুদ আল-শাতিল তার স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন তাদের কেউই বেঁচে নেই।'
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম ফিলিস্তিনি ক্রনিকলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দা আব্দুল রহমান আল-শাতিল।
আল-শাতিল বলেন, ‘শরণার্থী শিবিরের ওই বাড়িতে অনেক বেসামরিক নারী, পুরুষ ও শিশু ছিলেন। ইসরাইলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে বোমা হামলা করেছে। আর এতে বহু মানুষ নিহত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরাইলের আগ্রাসনে যেসব পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে আমার ভাতিজাও সে তালিকায় যুক্ত হলো। মাহমুদের পরিবারে আর কেউ বেঁচে নেই। ফিলিস্তিনি নাগরিকদের রেজিস্ট্রি থেকে নাম মুছে গিয়ে শহীদদের রেজিস্ট্রিতে আমার ভাতিজার পরিবারের নাম উঠেছে।’
গাজার আরও এক বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-আসার প্যালেস্টাইন ক্রনিকলকে বলেন, ‘ইসরাইলি বাহিনী আমার চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে।'
আল-আসার বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আল-আওয়ার, তারিক আল-আওয়ার ও জিয়াদ আল-আওয়ারের পরিবারের সবাই ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন। তারা সবাই ইসরাইলের হামলা থেকে বাঁচার জন্য আমার চাচা ড.আব্দেল রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনি কোনও সংগঠনের সঙ্গে তারা যুক্ত ছিলেন না। তারা সবাই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।’
এছাড়াও নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মুসা বলেন, `ইসরাইলের বোমা হামলায় আমার প্রতিবেশি আল-নাকলার পরিবারের চার সদস্য নিহত হয়েছেন।'
শুধুমাত্র আল শাতিল, আল আসারের স্বজনরা নয়, ইসরাইলের হামলায় গাজার শতশত পরিবারের হাজারো বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক পরিবার জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় গাজায় একইদিনে তাদের পরিবারের ৪২ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। গত ১৯ অক্টোবর গাজার শেখ এজলিন এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় তারা তাদের তিন প্রজন্মকে হারিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজার অন্তত ৬০০ পরিবারের সব সদস্যই মারা গেছেন। ফিলিস্তিনের নাগরিক রেজিস্ট্রি থেকে তাদের নাম পুরোপুরি মুছে গেছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় বিরতিহীনভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ২১ হাজারেরও বেশি। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।