চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ২০ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি ২২৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নতুন বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) এসব প্রস্তাব নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে ২০৩টি দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদেশি এবং দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
বিডার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাহিদ হোসেন তাঁর দফতর থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, গত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে সেবা খাতে। এ ছাড়া রাসায়নিক শিল্প, খাদ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, প্রকৌশল শিল্প ও বস্ত্র শিল্পে বিনিয়োগের জন্য দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন করেছে।
বিডার তথ্যানুযায়ী, নিবন্ধিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ আকার প্রায় ১০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা; এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ১০ হাজার ৯৩ কোটি টাকার। এসব বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ২২৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৫৭ হাজার ৯৩৭টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
নতুন বিনিয়োগ টানতে সমন্বিত নীতিমালা : বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে টানতে শিল্পের উন্নয়নে একটি সমন্বিত নীতিমালা করার ওপর জোর দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। শুধু তাই নয়, এ নীতিমালার অগ্রগতি জানিয়ে এক মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্যও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট পলিসি কোঅর্ডিনেশন কমিটির সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনতে অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে সরকার। সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইতে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে নির্মাণ করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। রাজধানীতে যানজট কমাতে মেট্রোরেল যোগাযোগের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও প্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার স্থাপন করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ স্থাপনের কারণে পাশের দেশের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে স্থাপন করা হয়েছে টানেল। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিসর ও সেবার মান বাড়াতে থার্ড টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটন তথা সেবা খাতে বিনিয়োগ টানতে কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে থাকছে দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন। তবে দেশব্যাপী অবকাঠামো খাত গড়ে তোলা হলেও সে অনুযায়ী বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রস্তাব আসেনি।
বিডার তথ্যানুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৩১ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তার তুলনায় প্রায় ১০ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব কম এসেছে। বিডার নির্বাহী সদস্য (লোকাল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন) মহসিনা ইয়াসমীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের প্রণোদনা বা সুবিধাগুলো দেওয়া হচ্ছে। কিছু বিষয় দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কিছু দেখছে অর্থ বিভাগ। আবার শিল্পের কিছু বিষয় দেখছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বহির্বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে আমদানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ভিন্ন ভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতি-নির্দেশনা জারি করছে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্তের অবতারণা হয়, যা বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করে। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চাইছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার দেওয়া সুবিধাগুলো একটি সমন্বিত নীতিমালার আওতায় আনা হোক; যাতে শিল্পোদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হন।