১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ১২:২৩:১২ অপরাহ্ন


তলে তলে কোন্দল চরমে, আট নেতাকে নোটিশ কারণ দর্শাতেই নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১০-২০২৩
তলে তলে কোন্দল চরমে, আট নেতাকে নোটিশ কারণ দর্শাতেই নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সংগৃহিত ছবি


তলে তলে কোন্দল চরমে, আট নেতাকে নোটিশ কারণ দর্শাতেই নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: তলে তলে চরমে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল। কারণ দর্শাতে দর্শাতেই নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ছে দলটি। প্রতি বছর দফায় দফায় কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করে সাধারণ নেতাকর্মীদের হয়রানী করে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। নেতাকর্মীদের এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নিজদের স্বার্থ বিরোধী কিছু ঘটলেই কারণে-অকারণে দর্শানো নোটিশ জারী করে কর্মীদের ভয় দেখিয়ে আসছেন। এ খেলা চলছে দীর্ঘ এক যুগ ধরে। কিন্তু এবারে 'মাইনাস টু'র (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) পরিকল্পনাকারী আট নেতার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছেন সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে একটি মতবিনিময় সভা করার ফলে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সা. সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সিনিয়র আট নেতার বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৪৭ (ক) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে কারণ দর্শানো নোটিশ জারী করা হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককের বিনা অনুমতিতে দলীয় সভা করা সংগঠনের নীতি ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়।  

কারণ দর্শানো নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন যথাক্রমে-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাছিব মামুন ও মহিউদ্দিন দেওয়ান, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, কার্যকরী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা ও আতাউল গণি আসাদ। তবে উক্ত সভায় উপস্থিত আরও ৮ জন নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ না দেওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখ পড়েছেন সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। তারা কৌশলে দর্শানো নোটিশ প্রদান থেকে বাদ রেখেছেন সভায় উপস্থিত-মাহবুবুর রহমান সহ-সভাপতি, শামসুদ্দিন আজাদ সহ-সভাপতি, জাহাঙ্গীর হোসেন ত্রাণ সম্পাদক, খোরশেদ খন্দকার, ফরিদ আলম, আলী হোসেন গজনবী, শরীফ কামরুল হীরা ও শিরিণ আকতার দিবা।  এ বিষয়ে সভাপতি ও সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি।    

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজপ্তিতে বলা হয়-শোকজ প্রাপ্তরা গত ১৬ অক্টোবর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে একটি রেস্টুরেন্টে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককেক না জানিয়ে সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে মতবিনিময় সভা করেছেন, যা সংগঠনের নীতি ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।

দলীয় গঠনতন্ত্রকে অমর্যাদা করে অসংগঠনিকভাবে দলীয় প্রধান ঘোষিত সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের অনুমতি ব্যতীত সংগঠনের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করেছেন। তাই গঠনতন্ত্রের ৪৭ (ক) ধারা অনুযায়ী শোকজপ্রাপ্তদের ১৪ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। শোকজের অনুলিপি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের কাছে পাঠানো হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনাকে ঘিরে আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে যে তীব্র লড়াই চলছিলো গত ১৬ অক্টোবর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে একটি রেস্টুরেন্টে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককেক না জানিয়ে সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে মতবিনিময় সভা তারই প্রভাব।

প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভানেত্রীর উপস্থিতিতেই গত ২২ সেপ্টেম্বর উক্ত সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ দর্শকের ভূমিকা পালন করে। কিছুটা অনুনয়-বিনয় করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ মঞ্চে বসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তা প্রধানমন্ত্রীর আসন থেকে অনেক দূরে। নাগরিক সংবর্ধনাটি পরিচালনা করেছেন নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা জেলার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী শাহজাহান চৌধুরী ওরফে টেনু মিয়ার ছেলে ইমদাদুর রহমান চৌধুরী ইমদাদ। তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ)। অসহায় হয়ে মঞ্চে বসে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারন সম্পাদক আব্দুস ছামাদ আজাদ ও নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো দলের সভানেত্রীর সামনেই দলের সংবিধান লঙ্ঘন করে সভাপতির উপস্থিতিতেই সংবর্ধনা সভার সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিনে। অর্থ ভাগাভাগি আর দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের আশায় সবাই পদ পদবির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রায় প্রতিবছরই প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন আব্দুস সোবহান গোলাপ। তিনিই আগে এসে সবার সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টা করতেন। কিন্তু ফলাফল ছিল শূন্য। তারপরই তাকে কেন বারবার সমঝোতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ বিষয়টি কারই বোধগম্য নয়। তার কারণে গত কয়েক বছরে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর ম্যানহাটনের একটি হোটেল লবিতে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী প্রকাশ্যেই আব্দুস সোবহান গোলাপকে অশালীন ভাষায় গালাগালি করেন। পরে উক্ত কর্মীকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অঙ্গসংগঠনের কিছু কর্মীকে বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিভক্ত গ্রুপের নেতৃত্বে একাংশে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বাধীন অংশ। আরেক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কয়েস, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম বাদশা, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী এবং চন্দন দত্তসহ অনেকে। এবার কিন্তু তাদের বিরোধ করতে দেখা যায়নি। উভয় গ্রুপের বিভক্তির কারণে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা ২০১৮ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছিনতাই হয়ে যায়। বিরোধের কারণে ওই সময় নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে নো মোর সিদ্দিক, নো মোর সিদ্দিক বলে স্লোগান দেওয়া হয়। সেই স্লোগান দেখে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিরক্ত হয়েছিলেন। নিজেই নাগরিক সংবর্ধনার সভাপতিত্ব করেন এবং সরকারি আমলারা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

সাধারণ নেতা-কর্মীরা বলছেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এবারে পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। তলে তলে চরমে উঠেছে দলীয় কোন্দল। শিগগির নতুন কমিটি ঘোষনা করা না হলে কিছুদিন পর আওয়ামী লীগের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না।