২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৫৭:৪৯ অপরাহ্ন


গাজার হাসপাতাল যেন মৃত্যুপুরী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২৩
গাজার হাসপাতাল যেন মৃত্যুপুরী ছবি: সংগৃহীত


ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলের বোমা হামলায় অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছেন। অনেকেই হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে এই হামলা চালানো হয় বলে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা 'নিরাপদ' ভেবে ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন অনেকে। হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর হাসপাতালের বহুতল ভবনটি জ্বলছে। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। ধ্বংসস্তূপ থেকে ভেসে আসছে আহত ব্যক্তিদের আর্তচিত্‍কার। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে হাসপাতালে একাধিক বিস্ফোরণ হয়। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানও এ হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন। গাজা শাসকগোষ্ঠী হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন এক হামলা চালায়। এর পর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।হামাসের গণমাধ্যম দপ্তর ইসরায়েলের এই হামলাকে 'যুদ্ধাপরাধ' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এদিকে হাসপাতালে হামলার ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এর আগে ১১ দিন ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল উপত্যকাটির কর্তৃপক্ষ। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত সাড়ে ১২ হাজার মানুষ।

গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। একে 'গণহত্যা' অভিহিত করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা 'মানবতার জন্য লজ্জাজনক'। হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় শত শত মানুষের মৃত্যুকে 'জঘন্য অপরাধ' অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি বাহিনীর হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রলায় বলেছে, ইসরায়েল যেভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় হামলা করছে, এতে সংঘাত ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েল যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না, গাজায় হাসপাতালে হামলা তার সর্বশেষ উদাহরণ। গাজায় 'নজিরবিহীন নৃশংসতা' বন্ধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গাজার আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসরও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এভাবে নির্বিচার হামলা 'আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন'। মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি বিবৃতি দিয়ে হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, 'ইসরায়েলের এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।' গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরানও।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও এ হামলাকে 'মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি' অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গাজার হাসপাতালের হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগও। এদিকে গাজার হাসপাতালে হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে একটি জরুরি বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেছে স্থানীয় সদস্য রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এমন হামলাকে 'যুদ্ধাপরাধ' হিসেবে বর্ণনা করেছে ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা আল-মিজান। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে 'ভয়ংকর' হিসেবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। যুদ্ধের কিছু নিয়মনীতি আছে। কোনো হাসপাতালে এভাবে হামলা করার ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

গাজার হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।