১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ০৫:৫৩:৫৪ পূর্বাহ্ন


গাজায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, বিশ্বজুড়ে তোপের মুখে ইসরাইল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
গাজায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, বিশ্বজুড়ে তোপের মুখে ইসরাইল হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত। ছবি: সংগৃহীত


নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতেছে ইসরাইল, হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে ছাড়ছে না বেসামরিকদেরও। তবে এবার যেন সব সীমাই অতিক্রম করে গেছে তেল আবিব। গাজার একটি হাসপাতালে তাদের বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলি বাহিনী এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছে অনেক দেশ।

ইসরাইলি নৃশংসতার চরম রূপ দেখছে বিশ্ব। আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না তাদের হামলা থেকে। 
 
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে অবরুদ্ধ গাজায় উপত্যকার আল-আহলি আরব হাসপাতালে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। এতে অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ধ্বংসস্তূপেও আটকা পড়েছেন অনেকে। পাশাপাশি আহতদের অবস্থা গুরতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 
 
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলা থেকে বাঁচতে গাজার বহু বাসিন্দা ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এছাড়া আগে থেকেই সেখানে ভর্তি ছিলেন ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আহত শত শত রোগী। 

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় ইসরাইলকে দায়ী করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত। হাসপাতালে ভয়াবহ বিমান হামলার এ ঘটনাকে 'যুদ্ধাপরাধ' বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও। তবে, এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে তেল আবিব। উল্টো হামাসের ছোড়া রকেটই ভুলবশত হাসপাতালে আঘাত হানে উল্লেখ করে, হতাহতের জন্য স্বাধীনতাকামী সংগঠনটিকে দায়ী করেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র।
 
এদিকে, মঙ্গলবার গাজা উপত্যকার আল-মাগাজি শরনার্থী শিবিরেও বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এ বিষয়ে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরনার্থীবিষয়ক সংস্থা জানায়, একটি স্কুলে হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের অবস্থা গুরতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্কুলটিতে অন্তত ৪ হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম। 

চলমান এ সংঘাতের মধ্যেই তেল আবিবের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে ইসরাইলের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে, প্রাণঘাতী বিমান হামলার পর বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। শুধু ফিলিস্তিন নয়, জর্ডান ও মিশরের সঙ্গেও জো বাইডেনের অনুষ্ঠেয় সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে বলে জানায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
 
তোপের মুখে ইসরাইল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের পরপরই গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। এই হামলাকে গণহত্যা বলে অভিহিত করে তিনি বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কেউ চুপ থাকতে পারে না। এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা মানবতার জন্য লজ্জাজনক।’
 
মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী ‘জঘন্য অপরাধ’ করেছে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতারও।

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘ইসরাইল ন্যুনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না।’ গাজার আল-আহলি হাসপাতালে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল–সিসি। 

চলমান সংঘাতের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকা ইরানও গাজায় হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরাইলি বাহিনী নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে গাজার নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষদের হত্যা করছে। জঘন্য এই অপরাধের মাধ্যমে ইহুদি এই রাষ্ট্রটি আরও একবার বিশ্বের সামনে তাদের অমানবিক ও পাশবিকাতেই তুলে ধরেছে।’
 
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও এই হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নৃশংস, জঘন্য, রক্তক্ষয়ী গণহত্যাগুলোর একটি’অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গাজার হাসপাতালের হামলার নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগও। 
 
এদিকে, গাজার হাসপাতালে হামলার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেছে স্থানীয় সদস্য রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। গাজার হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।  

গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। আর এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। 
 
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়েছেন। পাশাপাশি ফুরিয়ে আসছে অবরুদ্ধ গাজার খাবার, পানি, জ্বালানি। এতে ভয়াবহ মানবিক বির্পযয়ের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন নিরীহ ফিলিস্তিনিরা।