২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৫৮:৩২ অপরাহ্ন


সুপেয় পানি উৎপাদনে প্রস্তুত ভাণ্ডলজুড়ি শোধনাগার প্রকল্প
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১০-২০২৩
সুপেয় পানি উৎপাদনে প্রস্তুত ভাণ্ডলজুড়ি শোধনাগার প্রকল্প সংগৃহিত ছবি


যৌথ অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত অর্গাধিকার প্রকল্পের অন্যতম প্রকল্প ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প সুপেয় পানি উৎপাদনে প্রস্তুত হয়েছে।
পানি সরবরাহ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯০ ভাগের বেশি এগিয়েছে। গতকাল যোগাযোগ করা হলে ওই প্রকল্পের ডিরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম। তিনি জানান, পানি শোধনাগারের সার্বিক কাজ সম্পন্নসহ পরীক্ষামূলক শোধনাগারটি চালু করা হয়েছে এবং তা সুপেয় পানি উৎপাদনে প্রস্তুত রয়েছে। ওই প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি এখন ৮২ ভাগের বেশি এগিয়েছে।

প্রকল্প কাজের মধ্যে পটিয়া ও আনোয়ারায় অফিসসহ দুটি পৃথক ওয়াটার রির্জাভার তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। ২৩০ মিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনের মধ্যে শিকলবাহা খালের তলদেশসহ ৫০ মিটার পাইপ লাইন স্থাপন কাজ চলছে। অন্যদিকে ৫০ মিটার ট্রান্সমিশন ও ৮০ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন লাইন স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ১০ হাজার গ্রাহকপর্যায়ে সংযোগ দেয়ার জন্য আলাদাভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এবং আগামী এপ্রিলের মধ্যে গ্রাহকপর্যায়ে পানি সরবরাহের কাজ সমাপ্ত হওয়ার প্রত্যাশা করছেন ওই প্রকল্পের পিডি।
প্রকল্প কাজের সশেন্তাষজনক অগ্রগতির মধ্যদিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া বোয়ালখালী কর্ণফুলী এবং আনোয়ারা উপজেলার শিল্পখারখানাসহ গ্রাহকপর্যায়ে পানি সরবরাহের প্রত্যাশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে নতুনভাবে একই প্রকল্পের সাথে নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকা ও বাকলিয়ার একটি বিরাট অংশ সুপেয় পানির আওতায় আসছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, যৌথ অর্থায়নে এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে (ভূমি অধিগ্রহণসহ) এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে একই প্রকল্পের অধীনে নতুনভাবে নগরীর কল্পলোক ও বাকলিয়ার অংশ বিশেষ এলাকায় পানি সরবরাহ করার জন্য নতুন ভাবে সমীক্ষা শেষ হয়েছে। আর এ জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দিয়ে দেড় কিলোমিটার পাইপ লাইন নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে. প্রকল্প কাজ শুরুর পর থেকে প্রায় দুই বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনাকে মোকাবেলা করে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মুখে মাস্ক হাতে হ্যান্ড স্যানিটারাইজাড নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরার্মশ ও মনিটরিংয়ের (তদারকি) মধ্যদিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হয় বলে জানান, ওই প্রকল্পের ডিরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম।
জানা গেছে,কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী জ্যৈষ্ঠপুরার ভাণ্ডালজুড়ি পাহাড়ি এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে ও দুই পাহাড়ের পাদদেশে ৪১.২৬ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম ওয়াসার দৃষ্টিনন্দন ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার স্থাপন প্রকল্প।
একই সাথে ওই প্রকল্পের অধীনে পটিয়া বাইপাস এলাকায় পাঁচ একর জায়গায় ও আনোয়ারা দৌলতপুর মৌজায় ২.৯৪ একর জায়গায় পৃথক দুটো জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে পানি সরবরাহ প্রকল্পটি অনমোদন লাভ করেছিল। চট্টগ্রাম নগরীর, পশ্চিম পটিয়া আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত শিল্পাঞ্চলে পানি সঙ্কট দূরীকরণ এবং নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আধুনিকায়নে গৃহীত প্রকল্পসমূহের মধ্যে ওয়াসার অন্যতম প্রকল্প ছিল বোয়ালখালী ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার ও সরবরাহ প্রকল্প। আর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলসহ ১০ লাখ মানুষ সুপেয় পানির আওতায় আসবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় দাতা সংস্থা কোরিয়ান ইন্টার ন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) চট্টগ্রামের পানি সরবরাহ বৃদ্ধি ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য একটি মাস্টার প্লান প্রণয়ন করেছিলেন, ওই মাস্টার প্ল্যান মোতাবেক চট্টগ্রাম ওয়াসা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয় তার মধ্যে বোয়ালখালী ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ছিল অন্যতম।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহের জন্য ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ প্রকল্পের জন্য কর্ণফুলী নদী থেকে পানি এনে প্রকল্পে শোধন করে ওই পানি তিন উপজেলা আনোয়ারা বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী উপজেলার শিল্পাঞ্চলে ৮০ ভাগ আবাসিকের জন্য ২০ ভাগ পানি সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের সাথে এক হাজার ৩৬ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরবর্তীতে সমীক্ষা শেষে প্রকল্প ব্যয় সংশোধন করে তা এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকায় বর্ধিত করা হয়। এবং কোরিয়ান এক্সিম ব্যাকের সাথে নতুনভাবে চুক্তি সম্পাদনের পরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ৮২৫ কোটি টাকা ও অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।