যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ভুয়া চেক দেখিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির ব্যাংক একাউন্ট থেকে ১ কোটি সাড়ে ৮১ লাখ টাকা (১ লাখ ৬৫ হাজার ডলার) তুলে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে গ্রাহককে অপেক্ষা করতে বললে পরে ব্যাংক থেকে দ্রুত চম্পট দেয় প্রতারক। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে টিডি ব্যাংকের সকল ব্যাংক হিসাব বন্ধ করেছে সোসাইটির কর্মকর্তারা। ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এ ঘটনা অনুসন্ধান করছে। সংস্থাটি ইতিমধ্যে একজন বাংলাদেশিকে সনাক্ত করলেও তার পরিচয় প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত শুধুই কি একজন বাংলাদেশি, নাকি এর পেছনে কোনো চক্র কাজ করেছে তা তদন্ত শেষে জানা যাবে। প্রথম ৫ হাজার ডলারের চেক জালিয়াতির পর তাৎক্ষণিক ব্যাংকে অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরো দুটি চেকে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার ক্লিয়ারেন্স পায় । সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন দাবি করেন, বাংলাদেশ সোসাইটির একাউন্ট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লোপাট করা অর্থ পুরোপুরি ফেরত পাওয়া গেছে।
নওশেদ জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে টিডি ব্যাংক ডিটমার্স বুলেভার্ড শাখা থেকে একটি ফোন আসে তার কাছে। একজন নারী কর্মকর্তা জানান যে, জনৈক মামুন আবু ৫ হাজার ডলারের একটি চেক জমা দিয়েছেন। চেক নম্বর ২৯০৩। চেক ইস্যুর তারিখ লেখা ১৯ সেপ্টেম্বর। চেকের মেমোতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭৩ স্ট্রিটে স্টেজ প্রোগ্রামের জন্য। নারী কর্মকর্তার কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চেকটি পরিশোধ না করার অনুরোধ জানান। এমনকী বাহককে পুলিশে দেওয়ার অনুরোধ জানান। ওইদিন চেকটি পরিশোধ করা হয়নি।
নওশেদ জানান, পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া ও তিনি ব্যাংকে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে হিসাবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। এরপর সতর্কতা অবলম্বন করতে প্রতি মুহূর্তে তিনি অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাবে নজর রাখছিলেন। কিন্তু এদিন বিকালে হঠাৎ তিনি দেখতে পান, ব্যাংক হিসাব থেকে ১৪ হাজার ডলার তুলে নেওয়া হয়েছে। অধিকতর পরীক্ষা করে দেখেন, ব্যাংকের একাউন্টে জনৈক রফিক উল্লাহর নামে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের একটি চেক জমা করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক ১৪ হাজার ডলার অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। বাকী অর্থ হয়তো পরে দেয়া হতো।
নওশেদ জানান, তিনি তাৎক্ষণিক টিডি ব্যাংকের কল সেন্টারে ফোন করে এ ব্যাপারে আপত্তি জানান। প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলার পর সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ১৪ হাজার ডলার অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা ১০ মিনিটে একই অ্যাকাউন্টে সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রব মিয়ার নামে ২০ হাজার ডলার অয়্যার ট্রান্সফার করা হয়। এ বিষয়টি কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। নিরূপায় হয়ে ব্যাংকে গিয়ে অভিযোগ জানানো হয়।
ব্যাংক থেকে তাদের জানানো হয়- সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রব মিয়ার নামে টিডি ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে সভাপতি নিজে অয়্যার ট্রান্সফার করে ২০ হাজার ডলার নিয়েছেন। অথচ সভাপতি জানিয়েছেন, টিডি ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টই নেই। কিছুদিন আগে সভাপতির সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর কম্প্রোমাইজড হয়েছে। এমনকী তার ফোন নম্বরও ক্লোন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- কেউ তার নামে অ্যাকাউন্ট করে এই অপকর্মটি করেছে।
বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ নওশেদ আরো জানান, টিডি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা ২০ হাজার ডলারও ফেরত দিয়েছেন। এরপর গত ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরী কমিটির জরুরি সভা ডেকে ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বার্থে টিডি ব্যাংকে সোসাইটির সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সকল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
এদিকে এই জালিয়াতির ঘটনায় ১১০ প্রিসিঙ্কটে একটি অভিযোগ দায়ের করেন নওশেদ হোসেন। পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। যেহেতু লক্ষাধিক ডলারের অভিযোগ, এজন্য পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত করছে এফবিআইও। প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এই চেক জালিয়াতির সঙ্গে একজন বাংলাদেশি জড়িত, যে সশরীরে ব্যাংকে গিয়েছিল। পুলিশ তোর আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে চেক থেকে । তাকে সনাক্ত করা গেছে। তবে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে বাংলাদেশির পরিচয় প্রকাশ করেনি গোয়েন্দারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী জানান, সোসাইটির ব্যাংক হিসাব জালিয়াতির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। তিনি বলেন, সোসাইটর সকল অর্থ সবার আমানত। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় সব অর্থ উদ্ধার করা গেছে। তিনি বলেন, অপরাধী যেই হোক সনাক্ত হবে।